অজিত রায় ছিলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক। প্রথিতযশা কন্ঠ শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভুবনে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে চার দশক কালেরও অধিক সময় ধরে তাঁর দৃপ্ত পদচারণায় মুখরিত ছিল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল।
শিক্ষা ও সঙ্গীত
১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন অজিত রায়। কৈশোরেই তবলা বাজানো শিক্ষা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি, তাঁকে গানে হাতে খড়ি দিয়েছেন তার মা কণিকা রায়।গান শেখার প্রেরণা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন। পরে টেলিভিশন প্রচলনের পর থেকে সেখানেও গান গেয়েছেন তিনি। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়কাল হতে প্রতি বছর ভাষা আন্দোলনের বিশেষ দিন হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে স্মরণ করে একটি করে নতুন গান করে আসছেন।এই রকমই একটি গান হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত বিদ্রোহী কবিতায় আলতাফ মাহমুদের সুর করা গান।
চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণনেপথ্য গায়ক হিসেবে অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অজিত রায় অংশগ্রহণ করেছেন। এগুলো হলো - রিপোর্টার, জীবন থেকে নেয়া, যে আগুনে পুড়ি, জন্মভূমি, কোথায় যেন দেখেছি এবং কসাই। তাছাড়াও তিনি সুরুজ মিয়া চলচ্চিত্রে বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রষাটের দশকে রবিঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা' গানটিকে তিনি মাঠে-ময়দানে গেয়ে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।সহকর্মী শিল্পীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে তিনি কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।এসময় তাঁর সতীর্থ হিসেবে ছিলেন - আপেল মাহমুদ, আব্দুল জব্বার, সমর দাস, কাদেরী কিবরিয়া, সুজেয় শ্যাম-সহ অন্যান্য শিল্পীরা। এ সময়ে তাঁর রচিত ও সুরারোপিত বিখ্যাত গানগুলো রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীসহ সাধারণ মানুষদেরকে স্বদেশকে ঘিরে চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল।পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীতও পরিবেশন করেছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয় গানগুলো হলোঃ-
পারিবারিক জীবন
অজিত রায় ১৯৩৮ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশের রংপুর জেলার উলিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম কণিকা রায়। বৈবাহিক সূত্রে বুলা রায় তার সহধর্মিনী। তাদের সংসারে শ্রেয়শী রায় মুমু নামে এক কন্যা এবং রোমাঞ্চ রায় নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
কর্মজীবন
১৯৭২ সালে অজিত রায় তৎকালীন বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং ৯ অক্টোবর, ১৯৯৫ সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। ১৯৭২ সালেও বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত গমন করেছিলেন।
এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন৷
পুরস্কার ও সম্মাননা
২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন অজিত রায়। এছাড়াও, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি।সেগুলো হলোঃ-
সঙ্গীতশিল্পী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অজিত রায় বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুস সংক্রমণ ব্যাধিতে ভুগছিলেন। ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১, রবিবার দুপুর ১:০৫ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ অজিত রায়ের প্রতি তাদেঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। পরে পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটে তাঁকে দাহ করা হয়।
তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন - তপন মাহমুদ, ফকির আলমগীর, রথীন্দ্রনাথ রায়, রফিকুল আলম, সাজেদা চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার,আসাদুজ্জামান নূর, মো. গোলাম কুদ্দুসসহ বিভিন্ন স্তরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
শিক্ষা ও সঙ্গীত
১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন অজিত রায়। কৈশোরেই তবলা বাজানো শিক্ষা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি, তাঁকে গানে হাতে খড়ি দিয়েছেন তার মা কণিকা রায়।গান শেখার প্রেরণা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন। পরে টেলিভিশন প্রচলনের পর থেকে সেখানেও গান গেয়েছেন তিনি। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়কাল হতে প্রতি বছর ভাষা আন্দোলনের বিশেষ দিন হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে স্মরণ করে একটি করে নতুন গান করে আসছেন।এই রকমই একটি গান হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত বিদ্রোহী কবিতায় আলতাফ মাহমুদের সুর করা গান।
চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণনেপথ্য গায়ক হিসেবে অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অজিত রায় অংশগ্রহণ করেছেন। এগুলো হলো - রিপোর্টার, জীবন থেকে নেয়া, যে আগুনে পুড়ি, জন্মভূমি, কোথায় যেন দেখেছি এবং কসাই। তাছাড়াও তিনি সুরুজ মিয়া চলচ্চিত্রে বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রষাটের দশকে রবিঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা' গানটিকে তিনি মাঠে-ময়দানে গেয়ে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।সহকর্মী শিল্পীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে তিনি কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।এসময় তাঁর সতীর্থ হিসেবে ছিলেন - আপেল মাহমুদ, আব্দুল জব্বার, সমর দাস, কাদেরী কিবরিয়া, সুজেয় শ্যাম-সহ অন্যান্য শিল্পীরা। এ সময়ে তাঁর রচিত ও সুরারোপিত বিখ্যাত গানগুলো রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীসহ সাধারণ মানুষদেরকে স্বদেশকে ঘিরে চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল।পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীতও পরিবেশন করেছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয় গানগুলো হলোঃ-
- একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা
- অপমানে তুমি সেদিন
- কথা দাও কথাগুলো
- আমি যুগে যুগে আসি
- এদেশ বিপন্ন
- হে বঙ্গ ভান্ডারে তব
- ও আমার দেশের মাটি
- স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে আজ
- বিজয় নিশান উড়ছে ঐ
- বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি
পারিবারিক জীবন
অজিত রায় ১৯৩৮ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশের রংপুর জেলার উলিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম কণিকা রায়। বৈবাহিক সূত্রে বুলা রায় তার সহধর্মিনী। তাদের সংসারে শ্রেয়শী রায় মুমু নামে এক কন্যা এবং রোমাঞ্চ রায় নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
কর্মজীবন
১৯৭২ সালে অজিত রায় তৎকালীন বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং ৯ অক্টোবর, ১৯৯৫ সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। ১৯৭২ সালেও বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত গমন করেছিলেন।
এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন৷
পুরস্কার ও সম্মাননা
২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন অজিত রায়। এছাড়াও, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি।সেগুলো হলোঃ-
- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদ থেকে 'শব্দসৈনিক পদক
- ১৯৮৮ সালে সিকোয়েন্স পদক
- বেগম রোকেয়া পদক
- ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী পদক
- রবি রশ্মি পদক
- ২০১১ সালে রবীন্দ্র পদক
- রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের গুণীজন পদক
- বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার শ্রদ্ধাঞ্জলি পত্র
- চট্টগ্রাম ইয়ুথ কয়্যার অ্যাওয়ার্ড
সঙ্গীতশিল্পী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অজিত রায় বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুস সংক্রমণ ব্যাধিতে ভুগছিলেন। ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১, রবিবার দুপুর ১:০৫ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ অজিত রায়ের প্রতি তাদেঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। পরে পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটে তাঁকে দাহ করা হয়।
তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন - তপন মাহমুদ, ফকির আলমগীর, রথীন্দ্রনাথ রায়, রফিকুল আলম, সাজেদা চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার,আসাদুজ্জামান নূর, মো. গোলাম কুদ্দুসসহ বিভিন্ন স্তরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।