বৃষ্টি নিয়ে গানের গল্প
নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হওয়া গানগুলোর মধ্যে উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী তৌসিফ বৃষ্টিকে নিয়ে এসেছেন নতুন ধারায়। তার প্রথম সলো অ্যালবাম ‘অভিপ্রায়’-এ স্থান পাওয়া, ‘বৃষ্টি ঝরে যায় দু’চোখে গোপনে, সখী গো নিলা না খবর যতনে...’ শিরোনামের এই গানটির মাধ্যমেই প্রথম পরিচিতি পান তিনি—এমনই দাবি করলেন নতুন প্রজন্মের এই শিল্পী। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হওয়া এ গানের মাধ্যমে যতটা পরিচিতি পেয়েছেন, তার কিছু অংশও আশা করেননি তখন তিনি। গানের ক্ষুধা মিটানোর জন্যই সঙ্গীতাঙ্গনে আসা হয়েছিল। এর জন্য সুর ও সঙ্গীত পরিচালক টপি রেনারের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ বলে জানান। মেডিকেলে পড়ার সময় এ গানটি লেখা হয় তৌসিফের। বৃষ্টিভেজা দিনে জানালার কাছে বসে কবিতা লেখার ছলেই গানটির জন্ম। তারপর তার প্রিয় আড্ডাস্থল টপি রেনারের স্টুডিওতে বসেই সুর করা হয়েছিল। বৃষ্টির সঙ্গে সখীর শূন্যতা, এই কথাগুলো কোন দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছিল জানতে চাইলে প্রথমে হেসে দেন তৌসিফ। অতঃপর বললেন, সম্পূর্ণ কল্পনাতে সখীকে এঁকেই গানটি লেখা হয়। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে এমন কেউ নেই বলে জানাতেও ভুল করেননি এই শিল্পী। গান রেকর্ডিং করার সময়কালে কোনো মধুর বা বেদনার স্মৃতি আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন, ভয়েজ রুমে যখন গানটি গাইতে গেলাম তখন সখীকে ও বৃষ্টিধারাকে অনুভূত করতে চাইলাম। অবশেষে অন্য গানগুলোর চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম সময়ে তা রেকর্ডিং করা হয়েছিল, যা প্রথম জীবনে আমাকে অনেক সাহস যুগিয়েছিল।
বৃষ্টি এসেছে মনে
|
‘বৃষ্টি এসেছে মনে / অসময়ে এই জীবনে / বৃষ্টি থেকো গো তুমি / সারাক্ষণ আমরণ’— বৃষ্টির প্রেমে পড়ি ক্লাস সেভেন থেকেই। তারপরই শুরু হয় ভালোলাগা, ভালোবাসা। আজও বৃষ্টিকে ভালোবাসী, হৃদয়ের গভীর থেকেই তাকেই ভালোবাসী। বৃষ্টিকে নিয়ে এভাবেই তার অনুভূতির ধারা ঝরে পড়ছিল শিল্পী আগুনের মুখ থেকে। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘ বৃষ্টি রে বৃষ্টি আয়না জোরে’ ছিল তার আরও একটি জনপ্রিয় গান। আলাউদ্দিন আলীর সুরে সাজানো নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই গানের পেছনে কোনো অন্য রকম ঘটনা না থাকলেও বৃষ্টিকে খুঁজতে কিংবা জীবন সাজে সাজাতে পথ পাড়ি দিয়েছেন নানা অভিজ্ঞতার। গেয়েছেন বৃষ্টি-সংবলিত অনেক গান। হয়েছেন বৃষ্টি বিলাসী। বৃষ্টির প্রতি এ ভালোবাসার রেশ ধরেই ১৯৯৬ সালে বের হয়েছিল তার সলো অ্যালবাম ‘বৃষ্টি ভেজা রাত’। প্রশ্ন করা হয়েছিল বৃষ্টিকে নিয়ে যখন এত অনুভূতি তখন কখনও কি এমন হয়েছিল যে, বৃষ্টিকে নিয়ে গাইতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে। হা হা হা করে হেসে উঠলেন আগুন। জানান দিলেন অদ্ভুত এক ঘটনার। বৃষ্টিকে নিয়ে জীবনে গাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বারই অনেক অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল আমাকে। অনেক সময় ইমোশনাল হয়ে পড়েছি। বারবার গাইতে হচ্ছিল। তবে আলী আকবর রুপুর সুরে বৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত ‘আমি তোমায় ভুলে গেছি।’ শিরোনামে একটি গানে কণ্ঠ দেয়ার জন্য তিনি টানা তিন দিন লাগিয়েছিলেন। আর তার কারণটাও ছিল অদ্ভুত। প্রথম দিনে যখন ভয়েজ দিতে গেলেন তখন গানের প্রথম অংশ গাইতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। দ্বিতীয় দিনেও একই অবস্থা হয়েছিল তার। অবশেষে আলী আকবর রুপুর সাহসে নিজেকে শক্ত করে তা গাইতে পেরেছিলেন তৃতীয় দিনে। এছাড়া জাহিদের কথা ও সুরে ‘বৃষ্টি এসেছে মনে’ তার প্রিয় গানের সূচিতে প্রথম দিকে জায়গা করে রেখেছিল সব সময়। বৃষ্টিকে নিয়ে শিল্পী আগুনের যখন এত ভালোলাগা তখন তার কাছে জানতে চাইলাম, বৃষ্টি নামে তার জীবনে কেউ ছিল নাকি যে বৃষ্টিকে নিয়ে এত দুর্বলতা, এত চিন্তা-চেতনা। এবার খুব দৃঢ় কণ্ঠে জবাব এলো ছিল, এখনও আছে। ও এখন দুই সন্তানের জননীও হয়ে গেছে। এমন জবাব শুনে আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম। তাহলে কে এই বৃষ্টি? আগুন হেসে দিলেন এবার। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার সহধর্মিণী তান্নাকে ডাকলেন। তান্না যখন আসল তখন আগুন হাসি দিয়ে বললেন, এই সে বৃষ্টি। যদিও তার এটা ছদ্ম নাম। তবুও সে ছড়িয়ে আছে আমার গানে, জড়িয়ে আছে আমার প্রাণে।
|
বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দ থেকে কনাও পিছিয়ে যাননি। ২০০৯ সালে জাগো ছবিতে কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া ‘ঝুম ঝুম বৃষ্টি’ ছিল তার একটি আলোচিত গান। অর্ণবের কম্পোজিশন এবং ইশতিয়াকের কথা ও সুরে কনা কল্পনার বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন এই গানে। অন্যান্য ভালো সব গানের মতো এ গানটিও ছিল একই ধারার। তবুও কনা কোথাও যেন অন্যরকম অনুভূতি পেয়েছিলেন গানটিতে। তাই এ গানটিতে কণ্ঠ দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু কনাই সময় দিয়েছিলেন দেড় ঘণ্টার বেশি। বেঙ্গল স্টুডিওতে রেকর্ডিং হওয়া এ গানের সাড়া কেমন ছিল—এমন প্রশ্নের উত্তরে কনা বলেছেন, আমি নিজে জাগো ছবিটি দেখেছিলাম। অসম্ভব সুন্দর গল্পের ধারায় আমি মনে করি, আমার এবং কুমার বিশ্বজিত্ দার গাওয়া গানটি ছিল অসাধারণ। দর্শকের কাছ থেকে অনেক সাড়া পেয়েছিলাম গানটিকে ঘিরে। বৃষ্টির গানের ক্ষেত্রে অনুভূতি জানতে চাইলে কনা বলেন, অন্যান্য বৃষ্টির গান থেকে এ গানটি ছিল অন্যরকম। দারুণ কম্পোজিশন করেছিলেন অর্ণব। এছাড়া গানটি গাওয়ার ক্ষেত্রে মন থেকে কোনো এক অজানা কারণে অতিরিক্ত সতর্ক ছিলাম। ভালোলাগার সবটুকু গানটিতে কণ্ঠের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছি। কখন থেকে এমন অনুভূতি তৈরি হয়েছিল প্রশ্ন করলে কনা জবাব দিলেন, অর্ণব ভাই যখন ফোন করে বললেন, ফিল্মে একটা গান গাইতে হবে, তখন আমি ধরে নিয়েছি এ গানের কম্পোজিশন অন্যান্য গানের চেয়ে একটু হলেও আলাদা হবে। কিন্তু এর ক্ষেত্রে নতুন অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতার তৈরি হবে তা বুঝতে পারিনি। তবে সব কিছুর মাঝে আরেকটি সত্য হলো, গানটি গাওয়ার ক্ষেত্রে যখন আমি অতিরিক্ত অনেক সময় নিয়ে ফেলেছিলাম তখন নিজের মধ্যে একটা ভয়ও কাজ করছিল। যদিও সবার সহযোগিতায় তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম খুব সহজ এবং সাবলীলভাবে।
রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি যখন ঝরেরে তোমার কথা শুধু মনে পড়েরে...রবি চৌধুরী
এখনও বৃষ্টি দেখলে আনমনা হয়ে যাই। মনের খেয়ালে-বেখেয়ালে নিজেকে খুঁজি স্বপ্নীল মুখের এক অনিন্দ্র ধারায়। তাই বৃষ্টির সঙ্গে গানের সখ্যের চেয়ে মনের সখ্যই বেশি। আর সেই মনের টান থেকেই আমার বৃষ্টি সম্পর্কিত সব গানের জন্ম হয়। এক নিঃশ্বাসে এই কথাগুলো বলেছিলেন কণ্ঠশিল্পী এবং বর্তমানে সঙ্গীত পরিচালক রবি চৌধুরী। নব্বই দশকের শুরুতে যে গানগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছিল এর মধ্যে তারই গাওয়া বৃষ্টি সম্পর্কিত রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি যখন ঝরেরে তোমার কথা শুধু মনে পড়েরে... ছিল অন্যতম, যা আজও রবি ভক্তদের আলোড়িত করে নিত্যনতুনভাবে। রোমান্টিক ধারার এ গানের গল্প আড্ডায় উঠে এসেছিল এর অন্তরালের নানা কথা। রাজশাহীর রিতা নামে এক অচেনা মেয়ের মাধ্যমেই এই গানের প্রথম যাত্রা শুরু হয়। গানের কথার প্রথম চার লাইন রিতার মুখ থেকেই শোনা হয়েছিল বলে জানালেন রবি। এরপর তা নিয়ে কাজী ফারুক বাবুলের সঙ্গে বসার পর গানের বাকি কথা সাজিয়েছিলেন এবং তাতে সুর দিয়েছিলেন রানা ও রবি নিজেই। জানতে চেয়েছিলাম এই গানের আর কী কী স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। উত্তরে যা এলো তা ছিল রীতিমত বিস্ময়কর। প্রেম দাও অ্যালবামে স্থান পাওয়া এই গানটি যেদিন স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়েছিল, সেদিন এর সঙ্গে আরও ৫টি গান রেকর্ড করা হয়। আর এই ছয়টি গান রেকর্ড করতে সময় নেন মাত্র ২ ঘণ্টা। গানটির মান নিয়ে প্রশ্ন করতেই অবলীলায় বললেন, আসলে তখন অতকিছু ধরে ধরে গান করা হয়নি। সুর, কথা ঠিক থাকলেই হতো। তবে এটা সত্যি, এ অনেকটা কঠিনই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে রবি আরও জানালেন, তিনি নাকি এ গানটি নিয়ে মোটেই আশাবাদী ছিলেন না। এরপর রবি চৌধুরী তার সঙ্গীত জীবনের ১৮ বছরে বৃষ্টি নিয়ে অনেক গান করেছেন। নিজে লিখেছেন, সুর করেছেন আবার কখনও শুধুই কণ্ঠ দিয়েছেন। কিন্তু এখনও সেই প্রথম অ্যালবামের রিমঝিম বৃষ্টি মনের চালে রিমিঝিমি শব্দ তুলে যায় প্রতিনিয়ত।
এখনও বৃষ্টি দেখলে আনমনা হয়ে যাই। মনের খেয়ালে-বেখেয়ালে নিজেকে খুঁজি স্বপ্নীল মুখের এক অনিন্দ্র ধারায়। তাই বৃষ্টির সঙ্গে গানের সখ্যের চেয়ে মনের সখ্যই বেশি। আর সেই মনের টান থেকেই আমার বৃষ্টি সম্পর্কিত সব গানের জন্ম হয়। এক নিঃশ্বাসে এই কথাগুলো বলেছিলেন কণ্ঠশিল্পী এবং বর্তমানে সঙ্গীত পরিচালক রবি চৌধুরী। নব্বই দশকের শুরুতে যে গানগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছিল এর মধ্যে তারই গাওয়া বৃষ্টি সম্পর্কিত রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি যখন ঝরেরে তোমার কথা শুধু মনে পড়েরে... ছিল অন্যতম, যা আজও রবি ভক্তদের আলোড়িত করে নিত্যনতুনভাবে। রোমান্টিক ধারার এ গানের গল্প আড্ডায় উঠে এসেছিল এর অন্তরালের নানা কথা। রাজশাহীর রিতা নামে এক অচেনা মেয়ের মাধ্যমেই এই গানের প্রথম যাত্রা শুরু হয়। গানের কথার প্রথম চার লাইন রিতার মুখ থেকেই শোনা হয়েছিল বলে জানালেন রবি। এরপর তা নিয়ে কাজী ফারুক বাবুলের সঙ্গে বসার পর গানের বাকি কথা সাজিয়েছিলেন এবং তাতে সুর দিয়েছিলেন রানা ও রবি নিজেই। জানতে চেয়েছিলাম এই গানের আর কী কী স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। উত্তরে যা এলো তা ছিল রীতিমত বিস্ময়কর। প্রেম দাও অ্যালবামে স্থান পাওয়া এই গানটি যেদিন স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়েছিল, সেদিন এর সঙ্গে আরও ৫টি গান রেকর্ড করা হয়। আর এই ছয়টি গান রেকর্ড করতে সময় নেন মাত্র ২ ঘণ্টা। গানটির মান নিয়ে প্রশ্ন করতেই অবলীলায় বললেন, আসলে তখন অতকিছু ধরে ধরে গান করা হয়নি। সুর, কথা ঠিক থাকলেই হতো। তবে এটা সত্যি, এ অনেকটা কঠিনই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে রবি আরও জানালেন, তিনি নাকি এ গানটি নিয়ে মোটেই আশাবাদী ছিলেন না। এরপর রবি চৌধুরী তার সঙ্গীত জীবনের ১৮ বছরে বৃষ্টি নিয়ে অনেক গান করেছেন। নিজে লিখেছেন, সুর করেছেন আবার কখনও শুধুই কণ্ঠ দিয়েছেন। কিন্তু এখনও সেই প্রথম অ্যালবামের রিমঝিম বৃষ্টি মনের চালে রিমিঝিমি শব্দ তুলে যায় প্রতিনিয়ত।