মা নিয়ে গানের গল্প
'এমন একটা মা দে না' গানটি ১৯৭৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিটিভির বিশেষ একটি অনুষ্ঠানে প্রচার হয়। এর কথা ও সুর ডা. নাসির আহমেদের। ১৯৭৭ সালে গানটি প্রকাশের পরপর দারুণ সাড়া জাগায়। 'এমন একটা মা দেনা' গানের স্মৃতি প্রসঙ্গে ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, '১৯৭৪ সালের ঘটনা। তখন আমি কলেজে পড়ি। প্রয়াত শিল্পী ফিরোজ সাঁই আমাকে জানান, একটি গান করতে হবে। গানটি আমার গলায় বেশ মানাবে। গানটির গীতিকার ও সুরকার নাসির আহমেদ বর্তমানে প্রবাসে আছেন। তার কাছে গানটির কথা শুনে আমার ভীষণ ভালো লাগে। ফিরোজ সাঁই আমাকে জানান, সব ঠিক আছে। গানটি রেকর্ড করতে টাকা লাগবে। তাই তিনি আমাকে টাকা জোগাড় করতে বলেন। গানটি রেকর্ড করতে মোট খরচ হবে ৩৩০ টাকা। কিন্তু সেই সময়ে আমার কাছে এত টাকা-পয়সা ছিল না। টাকার অভাবে গান করা হচ্ছে না শুনেই এগিয়ে এলো আমার চার বন্ধু সাইফ, রুমী, শামীম ও এনায়েতুল্লাহ। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কাকরাইলের ইপসা স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করালাম। গানটির সেই গল্প মনে পড়লে আজও কান্না চলে আসে।'
গানটি প্রকাশের কিছুদিন পর ফেরদৌস ওয়াহিদকে ডেকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ জানান, 'গানটি সত্যিই অনেক সুন্দর হয়েছে। এ গানটি এখন যতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে, আগামী ৩০ বছর পর দেখবে গানটি আরও জনপ্রিয়তা পাবে।' এত বছর পরও গানটি সমান জনপ্রিয়।
গানটি প্রকাশের কিছুদিন পর ফেরদৌস ওয়াহিদকে ডেকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ জানান, 'গানটি সত্যিই অনেক সুন্দর হয়েছে। এ গানটি এখন যতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে, আগামী ৩০ বছর পর দেখবে গানটি আরও জনপ্রিয়তা পাবে।' এত বছর পরও গানটি সমান জনপ্রিয়।
মাগো মা, ওগো মা,
|
মাগো মা ওগো মা |
প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা দিলীপ বিশ্বাস একটি ছবি বানানোর কাজে হাত দিয়েছেন। ছবির নাম 'সমাধি'। পর্দায় 'মাগো মা, ওগো মা' গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন রাজ্জাক। সেই সময়ে গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মালিবাগের বাসায় আড্ডার ফাঁকে উঠে আসে নতুন নতুন গানের কথা ও সুর। গানটির সুর তৈরি করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছে। সব ঠিকঠাক হওয়ার পর গানটি রেকর্ড করা হয় কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিতে। গানটি প্রসঙ্গে শিল্পী খুরশীদ আলম জানান, 'গানটি প্রথম শোনার পরপরই আমার বেশ ভালো লাগে। এরপর গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার সময়ও আমার কাছে অন্যরকম আনন্দ লেগেছিল। মনের আবেগ ঢেলে দিয়ে গানটি সাজিয়েছিলাম।' খুরশীদ আলম আরও বলেন, 'মাকে নিয়ে প্রায় ২৫টি গান করেছি। কিন্তু এ গানের মতো আমার অন্য কোনো গান এত জনপ্রিয়তা পায়নি। এর সঙ্গে ছবির দৃশ্যও ছিল আবেগময়।'
১৯৭৬ সালের কথা। সত্য সাহা কলাবাগানে থাকতেন। প্রায়ই তাঁর বাসায় গিয়ে গানের চর্চা করতাম।একদিন তিনি বললেন, "দীলিপ বিশ্বাস পরিচালিত 'সমাধি' ছবির জন্য 'মা' নিয়ে একটা গান গাইতে হবে।' রেকর্ডিংয়ের দিন বেশ সেজেগুজে কাকরাইলের স্টুডিওতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি যন্ত্রীরা বসে আছেন। তখন সরাসরিই গান রেকর্ডিং হতো। যন্ত্রীরা বাজাচ্ছেন আমি গাইছি। রেকর্ডিং চলছে। প্রায় বিশবার গানটি টেক দিতে হয়েছিল। সারারাত ধরে চলে রেকর্ডিং। শেষ হয় সকালে। বেশ কষ্ট হয়েছিল।
১৯৭৬ সালের কথা। সত্য সাহা কলাবাগানে থাকতেন। প্রায়ই তাঁর বাসায় গিয়ে গানের চর্চা করতাম।একদিন তিনি বললেন, "দীলিপ বিশ্বাস পরিচালিত 'সমাধি' ছবির জন্য 'মা' নিয়ে একটা গান গাইতে হবে।' রেকর্ডিংয়ের দিন বেশ সেজেগুজে কাকরাইলের স্টুডিওতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি যন্ত্রীরা বসে আছেন। তখন সরাসরিই গান রেকর্ডিং হতো। যন্ত্রীরা বাজাচ্ছেন আমি গাইছি। রেকর্ডিং চলছে। প্রায় বিশবার গানটি টেক দিতে হয়েছিল। সারারাত ধরে চলে রেকর্ডিং। শেষ হয় সকালে। বেশ কষ্ট হয়েছিল।
শিল্পী : জেমস
কথা ও সুর : প্রিন্স মাহমুদ
'দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ' গানটি শোনেনি_ এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। নগরবাউল জেমসের গাওয়া গানটি তৈরির একটি ঘটনা। ১৯৯৭ সালে গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদের মা মারা যান। মায়ের শূন্যতা থেকেই গানটি তৈরি করেন তিনি। এ গানে অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে। প্রিন্স মাহমুদ বলেন, 'গানটি তৈরির পরই মনে হয়েছিল জেমস ভাইয়ের কণ্ঠেই বেশ মানাবে। তাছাড়া আমার মতো জেমস ভাইয়ের মা-ও মারা গেছেন।' স্টুডিওতে জেমস ভাই আসার পর কোনোভাবেই গাইতে পারছিলেন না, বারবার কেঁদে দিচ্ছিলেন। তাই বারবার তাকে আবার শুরু থেকে গাইতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর একই দৃশ্য। অবশেষে অনেকবার চেষ্টার পর গানটিতে সফলভাবে কণ্ঠ দেন জেমস। তিনি জানান, 'এ গানের কথাগুলো এমনই আবেগপ্রবণ যে, কণ্ঠ দেওয়ার সময় বারবার মায়ের কথা মনে পড়ছিল। তাই কান্না ধরে রাখতে পারিনি।' গানটি ১৯৯৯ সালে 'এখনও দু'চোখে বন্যা' মিশ্র অ্যালবামে প্রকাশ হয়।
গানটি প্রসঙ্গে জেমস বলেন - কদিন আগেই মা চলে গেছেন। মনটা ভীষণ খারাপ। মা তো জীবনের সবচেয়ে বড় ছায়া। এরই মাঝে প্রিন্স মাহমুদের সুরে একটা অ্যালবামে গাওয়ার কথা। প্রিন্সকে বললাম, এ অ্যালবামে মাকে নিয়ে একটা গান করব। প্রিন্স মাহমুদ গানের কিছু অংশ তৈরি করেন, আমরা দুজনে বসে ঠিক করি। এভাবে একসময় দাঁড়িয়ে গেল পুরো গান। রেকর্ডিংয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। আমি গাইছি 'ওরে তারা রাতের তারা মাকে জানিয়ে দিস, অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না'। এতটাই আবেগী হয়ে পড়েছিলাম যে রেকর্ডিং শেষে একটা কথাও বলিনি। কী বলব! এতক্ষণ তো মায়ের সঙ্গে কথা বলে এলাম!
কথা ও সুর : প্রিন্স মাহমুদ
'দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ' গানটি শোনেনি_ এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। নগরবাউল জেমসের গাওয়া গানটি তৈরির একটি ঘটনা। ১৯৯৭ সালে গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদের মা মারা যান। মায়ের শূন্যতা থেকেই গানটি তৈরি করেন তিনি। এ গানে অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে। প্রিন্স মাহমুদ বলেন, 'গানটি তৈরির পরই মনে হয়েছিল জেমস ভাইয়ের কণ্ঠেই বেশ মানাবে। তাছাড়া আমার মতো জেমস ভাইয়ের মা-ও মারা গেছেন।' স্টুডিওতে জেমস ভাই আসার পর কোনোভাবেই গাইতে পারছিলেন না, বারবার কেঁদে দিচ্ছিলেন। তাই বারবার তাকে আবার শুরু থেকে গাইতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর একই দৃশ্য। অবশেষে অনেকবার চেষ্টার পর গানটিতে সফলভাবে কণ্ঠ দেন জেমস। তিনি জানান, 'এ গানের কথাগুলো এমনই আবেগপ্রবণ যে, কণ্ঠ দেওয়ার সময় বারবার মায়ের কথা মনে পড়ছিল। তাই কান্না ধরে রাখতে পারিনি।' গানটি ১৯৯৯ সালে 'এখনও দু'চোখে বন্যা' মিশ্র অ্যালবামে প্রকাশ হয়।
গানটি প্রসঙ্গে জেমস বলেন - কদিন আগেই মা চলে গেছেন। মনটা ভীষণ খারাপ। মা তো জীবনের সবচেয়ে বড় ছায়া। এরই মাঝে প্রিন্স মাহমুদের সুরে একটা অ্যালবামে গাওয়ার কথা। প্রিন্সকে বললাম, এ অ্যালবামে মাকে নিয়ে একটা গান করব। প্রিন্স মাহমুদ গানের কিছু অংশ তৈরি করেন, আমরা দুজনে বসে ঠিক করি। এভাবে একসময় দাঁড়িয়ে গেল পুরো গান। রেকর্ডিংয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। আমি গাইছি 'ওরে তারা রাতের তারা মাকে জানিয়ে দিস, অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না'। এতটাই আবেগী হয়ে পড়েছিলাম যে রেকর্ডিং শেষে একটা কথাও বলিনি। কী বলব! এতক্ষণ তো মায়ের সঙ্গে কথা বলে এলাম!
|
পিএ কাজল পরিচালিত 'স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা' চলচ্চিত্রের 'একটা চাঁদ ছাড়া রাত আঁধার কালো/ মায়ের মমতা ছাড়া কে থাকে ভালো' গানটির জন্য গীতিকার কবির বকুল আর সুরকার-গায়ক শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান কুমার বিশ্বজিৎ। এটি একাধারে বিজ্ঞাপনচিত্র, চলচ্চিত্র ও অডিও অ্যালবামে ব্যবহার করা হয়েছে। গানটি প্রথম বের হয় ২০০৯ সালে ওয়ারিদের বিজ্ঞাপনচিত্রে। এরপর 'স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গানটি জনপ্রিয়তা পায়। একই বছর গানটি প্রকাশ হয় কুমার বিশ্বজিতের একক অ্যালবাম 'রোদেলা দুপুর'-এ। গানটির গীতিকার কবির বকুল জানান, 'গানটি লেখার আগের রাতে মায়ের কথা ভেবেছি। মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে সারারাত কেটেছে। পরদিন গানটি লেখার সময় মনে হয়েছে_ অনেকদিন মাকে দেখা হয়নি।' অন্যদিকে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, 'গানটির কথা অসাধারণ। এতে কণ্ঠ দেওয়ার সময় মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ছিল।'
তুমি আমার আগে যেয়ো নাকো চলে
|
২০০০ সালের দিকে মৌলিক গান নিয়ে অ্যালবাম করি। গানটি 'ভুল করেছি ভালবেসে' অ্যালবামে প্রকাশ পায়। বহুদিন ধরে মনে মনে ভাবছিলাম মা নিয়ে একটা গান করব। মিল্টন খন্দকার একদিন আমাকে বললেন, "পলাশ, তোমার জন্য 'মা' নিয়ে একটা গান লিখেছি।" গানের কথাগুলো আমার বেশ মনে ধরল। সুর করার দায়িত্ব দেওয়া হয় সোহেল আজিজকে। সুরারোপ শেষে গানটির রেকর্ডিং হয়েছিল তান স্টুডিওতে। গাইতে গিয়ে কেমন যেন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। মনে হচ্ছিল কথাগুলো যেন আমি আমার মাকেই বলছি।