আধুনিক
গানের গল্প
'তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে, হূদয়ের কোঠরে রাখব'_এই লাইনটি তার প্রেমিকাকে একবার হলেও শুনাননি এমন প্রেমিক খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। এই কালজয়ী গান এখনো প্রজন্মের মুখে মুখে ফেরে।
বিলু, মিথি এবং আমি আমাদেরই কিছু গান রেকর্ডের জন্য প্রথম ঢাকায় আসি। তখন সাকিনা সরোয়ার ছিলেন অন্তরা স্টুডিওর কর্ণধার। আমাদের গানগুলো রেকর্ডের উদ্দেশে আমরা প্রথম তার ওখানে যাই। তখন জনাব আল মনসুর সাহেব বিটিভির কিছু কাজে অন্তরা স্টুডিওতে যান। সেখানে তিনি আমাদের গানগুলো শুনে বলেন, গানগুলো রেখে যেতে। আমরাও তার কথা মতো কাজ করি। বিটিভিতে শিউলিমালা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতো। সেখানেই আল মনসুর সাহেব এই গানটি টেলিভিশনে সরাসরি পরিবেশনের ব্যবস্থা করেন। তো যা-ই হোক, আমরা গানটি রেকর্ডের জন্য বিটিভিতে গেলাম। কিন্তু ওই দিন গানটি রেকর্ড হয়নি, কারণ, অন্যদের রেকর্ডের ভিড়ে আমাদের সুযোগ মেলেনি। তারপর ঝংকার স্টুডিওতে আমাদের তিনটি গান একসাথে রেকর্ড হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তিনটি গানই ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করে। আর জনাব আবু তাহের ছিলেন ঝংকার স্টুডিওর কর্ণধার। যখন এই গানই রেকর্ড হয়, তখন আমার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারপরও অসুস্থ শরীর নিয়ে স্টুডিওতে অবস্থান করেছিলাম আমি। তার উপর এত বেশি টেনশন ছিল যে আমার মনে আছে, আমি ২৭ বার বাথরুমে গিয়েছিলাম। রেকর্ডিংয়ের আগে এই টেনশন এখনো আমার পিছু ছাড়েনি। গানটি রেকর্ড হয়েছিল দুপুরে। গানটির গীতিকার ছিলেন আবদুলস্নাহ আল মামুন এবং সুর করেছেন নকীব খান। পরবর্তীতে গানটি অনেকেই গেয়েছেন, তবে আমার কণ্ঠেই জনপ্রিয়তা পায়।
এ গানের গীতিকার আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি একজন আর্কিটেক্ট। এখন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। গানের সুরকার নকীব খান। শিল্পী কুমার বিশ্বজিত্। এ গানের গল্প বললেন কুমার বিশ্বজিত্। ‘চট্টগ্রাম কাজেম আলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন নকীব খানের বাবা। স্কুলের ভেতরেই ছিল প্রধান শিক্ষকের বাসভবন। ওই বাড়ির নিচতলায় থাকতেন নকীব আর তাঁর ভাই পিলু খান। ওখানেই “তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে” গানটির সৃষ্টি। গানটি সেখানে তোলা। ১৯৮০ সালের দিকে বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। নাম ছিল যুবমেলা। অনুষ্ঠানের প্রযোজক আল মনসুর একদিন আমাকে বললেন তাঁর অনুষ্ঠানের জন্য দুটো গান করে দিতে। এক দিন পরই গানের শুটিং। কী করি। ধরলাম সংগীত পরিচালক আবু তাহেরকে (প্রয়াত)। তিনি এ গানের সংগীতায়োজন করেন। তেজকুনীপাড়ায় ঝংকার নামের একটা স্টুডিও ছিল। ওই দিন এই গানটি ছাড়াও “চতুরদোলাতে চড়ে দেখো ওই বধূ যায়” (এই গানটিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল) গানও রেকর্ড করি।’
বিশ্বজিত্ বলেন, ‘তবে “তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে” গানটি রেকর্ড করার পর শুনি যুবমেলা অনুষ্ঠানটি হবে না। আল মনসুর আমাকে বলেন, “গানটা রেখে দাও। কিছুদিন পর শিউলিমালা নামে আমি একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান শুরু করছি, ওই অনুষ্ঠানে এই গানটি করবে তুমি।” ১৯৮২ সালের প্রথম দিকে শিউলিমালায় গানটি আমি গাই। মনে আছে, আমাদের বাড়িতে সাদাকালো টিভি ছিল, কিন্তু তখন বিটিভির রঙিন যুগ শুরু হয়ে গেছে। আমার গানটি দেখার জন্য বাড়িতে ওই দিন রঙিন টিভি কিনে আনা হলো। গানটি প্রচার হওয়ার পরদিন একটা রিকশা নিয়ে বেড়াতে বের হলাম। যে শার্ট পরে টিভিতে গানটি গেয়েছিলাম; গায়ে আমার ওই শার্ট। রিকশা চট্টগ্রামের চেনা গলি দিয়ে ছুটছে। আর আমি দেখছি, আমাকে কতজন চিনতে পারে। সবার অভিনন্দন আর বাহ্বায় সেদিন বুঝে গেলাম, গান নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল, সেটা সত্যি হতে যাচ্ছে। এখন বলি, এই গানটির জনপ্রিয়তা এখনো আমি উতরে যেতে পারিনি।’
- ইত্তেফাক
বিলু, মিথি এবং আমি আমাদেরই কিছু গান রেকর্ডের জন্য প্রথম ঢাকায় আসি। তখন সাকিনা সরোয়ার ছিলেন অন্তরা স্টুডিওর কর্ণধার। আমাদের গানগুলো রেকর্ডের উদ্দেশে আমরা প্রথম তার ওখানে যাই। তখন জনাব আল মনসুর সাহেব বিটিভির কিছু কাজে অন্তরা স্টুডিওতে যান। সেখানে তিনি আমাদের গানগুলো শুনে বলেন, গানগুলো রেখে যেতে। আমরাও তার কথা মতো কাজ করি। বিটিভিতে শিউলিমালা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতো। সেখানেই আল মনসুর সাহেব এই গানটি টেলিভিশনে সরাসরি পরিবেশনের ব্যবস্থা করেন। তো যা-ই হোক, আমরা গানটি রেকর্ডের জন্য বিটিভিতে গেলাম। কিন্তু ওই দিন গানটি রেকর্ড হয়নি, কারণ, অন্যদের রেকর্ডের ভিড়ে আমাদের সুযোগ মেলেনি। তারপর ঝংকার স্টুডিওতে আমাদের তিনটি গান একসাথে রেকর্ড হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তিনটি গানই ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করে। আর জনাব আবু তাহের ছিলেন ঝংকার স্টুডিওর কর্ণধার। যখন এই গানই রেকর্ড হয়, তখন আমার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারপরও অসুস্থ শরীর নিয়ে স্টুডিওতে অবস্থান করেছিলাম আমি। তার উপর এত বেশি টেনশন ছিল যে আমার মনে আছে, আমি ২৭ বার বাথরুমে গিয়েছিলাম। রেকর্ডিংয়ের আগে এই টেনশন এখনো আমার পিছু ছাড়েনি। গানটি রেকর্ড হয়েছিল দুপুরে। গানটির গীতিকার ছিলেন আবদুলস্নাহ আল মামুন এবং সুর করেছেন নকীব খান। পরবর্তীতে গানটি অনেকেই গেয়েছেন, তবে আমার কণ্ঠেই জনপ্রিয়তা পায়।
এ গানের গীতিকার আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি একজন আর্কিটেক্ট। এখন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। গানের সুরকার নকীব খান। শিল্পী কুমার বিশ্বজিত্। এ গানের গল্প বললেন কুমার বিশ্বজিত্। ‘চট্টগ্রাম কাজেম আলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন নকীব খানের বাবা। স্কুলের ভেতরেই ছিল প্রধান শিক্ষকের বাসভবন। ওই বাড়ির নিচতলায় থাকতেন নকীব আর তাঁর ভাই পিলু খান। ওখানেই “তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে” গানটির সৃষ্টি। গানটি সেখানে তোলা। ১৯৮০ সালের দিকে বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। নাম ছিল যুবমেলা। অনুষ্ঠানের প্রযোজক আল মনসুর একদিন আমাকে বললেন তাঁর অনুষ্ঠানের জন্য দুটো গান করে দিতে। এক দিন পরই গানের শুটিং। কী করি। ধরলাম সংগীত পরিচালক আবু তাহেরকে (প্রয়াত)। তিনি এ গানের সংগীতায়োজন করেন। তেজকুনীপাড়ায় ঝংকার নামের একটা স্টুডিও ছিল। ওই দিন এই গানটি ছাড়াও “চতুরদোলাতে চড়ে দেখো ওই বধূ যায়” (এই গানটিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল) গানও রেকর্ড করি।’
বিশ্বজিত্ বলেন, ‘তবে “তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে” গানটি রেকর্ড করার পর শুনি যুবমেলা অনুষ্ঠানটি হবে না। আল মনসুর আমাকে বলেন, “গানটা রেখে দাও। কিছুদিন পর শিউলিমালা নামে আমি একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান শুরু করছি, ওই অনুষ্ঠানে এই গানটি করবে তুমি।” ১৯৮২ সালের প্রথম দিকে শিউলিমালায় গানটি আমি গাই। মনে আছে, আমাদের বাড়িতে সাদাকালো টিভি ছিল, কিন্তু তখন বিটিভির রঙিন যুগ শুরু হয়ে গেছে। আমার গানটি দেখার জন্য বাড়িতে ওই দিন রঙিন টিভি কিনে আনা হলো। গানটি প্রচার হওয়ার পরদিন একটা রিকশা নিয়ে বেড়াতে বের হলাম। যে শার্ট পরে টিভিতে গানটি গেয়েছিলাম; গায়ে আমার ওই শার্ট। রিকশা চট্টগ্রামের চেনা গলি দিয়ে ছুটছে। আর আমি দেখছি, আমাকে কতজন চিনতে পারে। সবার অভিনন্দন আর বাহ্বায় সেদিন বুঝে গেলাম, গান নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল, সেটা সত্যি হতে যাচ্ছে। এখন বলি, এই গানটির জনপ্রিয়তা এখনো আমি উতরে যেতে পারিনি।’
- ইত্তেফাক
গানটির কথা লিখেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী, সুর করেছেন লাকী আখান্দ। গানটির প্রথম শিল্পী শাকিলা জাফর। পরে গানটি জনপ্রিয়তা পায় শিল্পী সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠে। গানটি কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল—জানতে চাই গানের গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর কাছে। তিনি বলেন, ‘এ গানটি লিখেছিলাম সত্তরের দশকের শেষের দিকে। সিলেটের একটি চা-বাগানে আমার মেজ ভাই চাকরি করতেন। একবার সেখানে বেড়াতে গেলাম। ভাইয়া ছিলেন না। গার্ডেনে আমি একা। এক রাতে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম একটি উঁচু টিলার একদম ওপরে। দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি। হঠাত্ বিদ্যুত্ চলে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মনে হলো, আমি যেন জোনাকির ভেতরে হারিয়ে গেছি। ওই দৃশ্যটা মনে ছিল। ঢাকায় ফেরার পর দৃশ্যটা কল্পনা করে গানটা লিখে ফেলি। এরপর আশির দশকে বিটিভির একটি সংগীতানুষ্ঠানে লাকী আখান্দ বেশ কজন শিল্পীর গান করল। সেই অনুষ্ঠানেই এই গানটি সুর করে লাকী শাকিলা জাফরকে দিয়ে গাওয়ায়। তার অনেক পরে বিটিভির সুর ও বাণী অনুষ্ঠানে সামিনা চৌধুরীকে দিয়ে দ্বিতীয় দফায় গানটি গাওয়ায় লাকী। গানটি এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে কলকাতার আকাশবাণী থেকে গানটি প্রচারের জন্য আমার কাছ থেকে অনাপত্তি স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল।’
সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘মনে আছে, বিটিভির অডিটোরিয়ামে গানটির ধারণকাজ হয়েছিল। সেদিন হ্যাপী আখান্দও উপস্থিত ছিলেন। শুটিংয়ের সময় তিনি প্রযোজককে বললেন জোনাকি বোঝানোর জন্য লাইট দিয়ে বিপ (জ্বলা, নেভা) দেওয়ার জন্য। তারপর তিনি উধাও। কিছুক্ষণ পর হঠাত্ কোত্থেকে একটি বড় স্ট্যান্ড ফ্যান নিয়ে হাজির। আমার চুলগুলো যেন বাতাসে ওড়ে, সে জন্য ফ্যানটা চালিয়ে দিলেন। এটি আমার সংগীতজীবনের একটি উল্লেখযোগ্য গান।’
সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘মনে আছে, বিটিভির অডিটোরিয়ামে গানটির ধারণকাজ হয়েছিল। সেদিন হ্যাপী আখান্দও উপস্থিত ছিলেন। শুটিংয়ের সময় তিনি প্রযোজককে বললেন জোনাকি বোঝানোর জন্য লাইট দিয়ে বিপ (জ্বলা, নেভা) দেওয়ার জন্য। তারপর তিনি উধাও। কিছুক্ষণ পর হঠাত্ কোত্থেকে একটি বড় স্ট্যান্ড ফ্যান নিয়ে হাজির। আমার চুলগুলো যেন বাতাসে ওড়ে, সে জন্য ফ্যানটা চালিয়ে দিলেন। এটি আমার সংগীতজীবনের একটি উল্লেখযোগ্য গান।’
আমি হ্যামিলিনের সেই বাঁশিওয়ালা
গীতিকারঃ মাহফুজুর রহমান (যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী)
সুরঃ আবু তাহের (প্রয়াত)
শিল্পীঃ শুভ্র দেব
গানটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুভ্র দেব বলেন, ‘এই গানটির সৃষ্টি ১৯৮৪ সালে। ওই সময় রিয়াজউদ্দিন বাদশা বিটিভিতে স্বর্ণালী সন্ধ্যা নামে সংগীতবিষয়ক একটি অনুষ্ঠান প্রযোজনা করতেন। এর আগে ১৯৮২ সালে তিনি প্রথম আমার “চোখ বুজলেই ঘুম এসে যায়” গানটির মিউজিক ভিডিও করেন তাঁর একটি অনুষ্ঠানের জন্য।
‘একদিন তিনি বললেন, স্বর্ণালী সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে আমার একটা গান করবেন। তারপর আমি সুরকার আবু তাহের ভাইকে বললাম নতুন একটা গান করে দিতে। তিনি রাতে যেতে বললেন। গেলাম মোহাম্মদপুর বাঁশবাড়িতে তাঁর বাসায়। গিয়ে দেখলাম গান তৈরি। গীতিকার মাহফুজুর রহমান মাহফুজ সেদিন ছিলেন না। তিনি গানটি আগেই দিয়ে গেছেন। তাহের ভাই গানটি সুর করে রেখেছিলেন। তিনি গানটি তুলে দিলেন। এরপর গানটি রেকর্ড করি ধানমন্ডিতে ফেরদৌস ওয়াহিদের বিএমডিআই স্টুডিওতে। বিটিভিতে প্রচারিত হওয়ার পর রাতারাতি গানটি শ্রোতাপ্রিয় হয়। এর পর থেকে যেখানেই গান গাইতে গেছি, সেখানেই ভালোবাসার এই গানটি গাওয়ার অনুরোধ। একবার কিশোরগঞ্জের একটি কলেজে গানটি গাইছি; যখনই আমি “তোমাকেই আসতেই হবে” লাইনটি গাইলাম, তখনই দেখি মঞ্চের সামনে একটি মেয়ে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।’
শুভ্র দেব বলেন, ‘আসলে আজকে শুভ্র দেব হিসেবে আমার যে পরিচিতি, সেটা এই গান দিয়েই। আরেকটি তথ্য দিই। গীতিকার মাহফুজুর রহমানের কাছে আমি গানটির প্রেক্ষাপট কোথা থেকে নিয়েছেন জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, রবার্ট ব্রাউনিংয়ের “পাইড পাইপারস অব হ্যামিলিন” কবিতার ভাবটি নিয়ে ভালোবাসার আঙ্গিকে তিনি এই গানটি করেছেন।
‘একদিন তিনি বললেন, স্বর্ণালী সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে আমার একটা গান করবেন। তারপর আমি সুরকার আবু তাহের ভাইকে বললাম নতুন একটা গান করে দিতে। তিনি রাতে যেতে বললেন। গেলাম মোহাম্মদপুর বাঁশবাড়িতে তাঁর বাসায়। গিয়ে দেখলাম গান তৈরি। গীতিকার মাহফুজুর রহমান মাহফুজ সেদিন ছিলেন না। তিনি গানটি আগেই দিয়ে গেছেন। তাহের ভাই গানটি সুর করে রেখেছিলেন। তিনি গানটি তুলে দিলেন। এরপর গানটি রেকর্ড করি ধানমন্ডিতে ফেরদৌস ওয়াহিদের বিএমডিআই স্টুডিওতে। বিটিভিতে প্রচারিত হওয়ার পর রাতারাতি গানটি শ্রোতাপ্রিয় হয়। এর পর থেকে যেখানেই গান গাইতে গেছি, সেখানেই ভালোবাসার এই গানটি গাওয়ার অনুরোধ। একবার কিশোরগঞ্জের একটি কলেজে গানটি গাইছি; যখনই আমি “তোমাকেই আসতেই হবে” লাইনটি গাইলাম, তখনই দেখি মঞ্চের সামনে একটি মেয়ে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।’
শুভ্র দেব বলেন, ‘আসলে আজকে শুভ্র দেব হিসেবে আমার যে পরিচিতি, সেটা এই গান দিয়েই। আরেকটি তথ্য দিই। গীতিকার মাহফুজুর রহমানের কাছে আমি গানটির প্রেক্ষাপট কোথা থেকে নিয়েছেন জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, রবার্ট ব্রাউনিংয়ের “পাইড পাইপারস অব হ্যামিলিন” কবিতার ভাবটি নিয়ে ভালোবাসার আঙ্গিকে তিনি এই গানটি করেছেন।
কাল সারারাত ছিল স্বপনেরও রাত
গীতিকারঃ
সুরকারঃ শেখ সাদী খান
এমন কিছু গান থাকে যা কখনোই পুরোনো হয় না। সময়ের বয়স বাড়লেও গানের বয়স বাড়ে না। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে যায় গানের জনপ্রিয়তা। ‘কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত’ এমনই একটি গান। নব্বই দশকের শুরুর দিকে এই গানটি সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এখনো লোকের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু কালজয়ী এই গানটির প্রকৃত শিল্পী কে, তা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি। প্রায় দুই দশক ধরে ভারতের জীবন্ত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোঁশলের কণ্ঠে রেকর্ডকৃত ‘কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত’ গানটি বাংলাদেশ বেতারে শুনে আসছেন শ্রোতারা। আবার অন্যদিকে টেলিভিশন ও মঞ্চে গানটি গাইতে দেখা যায় দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনকে। ‘কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত’ গানটির প্রকৃতপক্ষে কে গেয়েছেন, তা জানতে আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম গানটির সুরকার খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খানের। তিনি জানালেন, আশা ভোঁশলে কিংবা বেবী নাজনীন তাদের কেউ-ই গানটির মূল শিল্পী নন। একেবারেই অখ্যাত একজন শিল্পীকে দিয়ে আশির দশকে একটি অডিও অ্যালবামের জন্য গানটি গাইয়েছিলেন শেখ সাদী খান। অ্যালবামটি তেমন প্রচার পায়নি। শিল্পীও থেকে যান আলোচনার বাইরে। এর কিছুদিন পর পরিচালক ফজল আহমেদ বেনজীর-এর একটি চলচ্চিত্রে গানটি সংযোজনের প্রস্তাব করেন শেখ শাদী খান। গানটি শুনে নির্মাতা খুবই পছন্দ করেন। শেখ শাদী খান তখন গানটি ওপার বাংলার কোনো জনপ্রিয় শিল্পীকে দিয়ে গাওয়ানোর চিন্তা করেন। শেখ সাদী খানের সুরে ফজল আহমেদ বেনজীর পরিচালিত ‘প্রতিরোধ’ ছবির ‘ডাকে পাখি খোলো আখি দেখো সোনালি আকাশ, গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন হৈমন্তী শুক্লা। এজন্য প্রথমে ‘কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত’ গানটির জন্য তাকেই ভাবা হয়। পরে আশা ভোঁসলেকে পাওয়াতে তাকেই গানটি তুলে দেওয়া হয়। কলকাতার একটি স্টুডিওতে গানটি পুনরায় রেকর্ড করা হয়। কিন্তু যে ছবির জন্য গানটি রেকর্ড করা হয়, সেই ছবিটির নির্মাণ পরবর্তীতে অসমাপ্ত রয়ে যায়। কিন্তু এমন একটি চমৎকার গান শ্রোতাদের কাছে না পৌঁছানোয় ফজল আহমেদ বেনজীর ও শেখ সাদী খানের মনে অতৃপ্তি রয়ে যায়। পরে পরিচালক ‘প্রেমের প্রতিদান’ ছবির কাজ শুরু করলে গানটি এ ছবিতে সংযোজন করা হয়। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় ‘প্রেমের প্রতিদান’ ইলিয়াস কাঞ্চন, দিতি, সোহেল চৌধুরী অভিনীত ছবিটি মুক্তির পর ‘কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত’ গানটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। গানটির সঙ্গে বেবী নাজনীনের সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে শেখ শাদী খান জানান, ‘সেই সময় হঠাৎ একদিন নাজনীন আমার কাছে গানটি গাওয়ার অনুমতি চান। আমি ভাবলাম, আশা ভোঁসলে বিদেশি শিল্পী। তিনি নিশ্চয়ই গানটি সবসময় গাইতে পারবেন না। বেবী নাজনীন গাইলে ক্ষতি কী! বেবী নাজনীন তার একটি নতুন অ্যালবামের জন্য গানটি গান। আমিই তা নতুন করে রেকর্ড করি। সাউন্ডটেক থেকে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। অ্যালবামের মোট দু’টি গান আমি করেছিলাম। আরেকটি গান ছিল ‘মন কি ফুলের মতো’ শিরোনামের। শেখ শাদী খান আরো বলেন, ‘বেবী নাজনীন দেশ-বিদেশে গানটি গেয়ে এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন। তা আশা ভোঁসলের পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিল না। শ্রোতারা বেবী নাজনীনের গায়কী পছন্দও করেছেন।’