আশা দিয়ে শুরু নিরাশায় শেষ
বছরের শুরুটা ছিল বেশ সুরেলা, আশা জাগানিয়া। দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পর মেঘলা আকাশ
দেখলে যেমন অনুভূতি হয়, ঠিক তেমনটি। বছরের প্রথমাংশে বেশ কিছু মানসম্মত তারকা
অ্যালবাম প্রকাশ, উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি কনসার্ট আয়োজন আর সংগীত সংশ্লিষ্টদের নানা মাত্রিক উদ্যোগে বছর জুড়ে আলোর প্রত্যাশা করেছিল সবাই। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা যতই উল্টাতে লাগলো, ততই নিরাশার লু হাওয়া বইতে শুরু করলো সংগীতাঙ্গনে-সংগীত প্রিয়দের মনে। ঘটলো একের পর এক বিব্রতকর কিংবা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সেই ধারাবাহিকতায় বছর শেষে সংগীতাঙ্গন নিমজ্জিত হলো ভৌতিক অন্ধকারে। যে নিকশ কালো অন্ধকারে সে অর্থে মশাল জ্বালাতে পারেনি অনেক মানসম্মত অ্যালবাম। তাই সংগীত বিশ্লেষকদের মতে বছরের শেষাংশে এসে গুটি কয় তারকা শিল্পীর ব্যক্তিগত ঘটনার কারণে পুরো বছরের তিল তিল করে গড়া সৃষ্টিগুলো নষ্ট হয়েছে। এক কথায় চলতি বছরে সংগীতাঙ্গনের সালতামামি দাঁড়িয়েছে- এক গামলা দুধের মধ্যে এক বিচি তেঁতুল নীরবে ছেড়ে দেয়ার মতোই। বছরব্যাপী দুধ আর তেঁতুলের এই গল্পটাই ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে ২০১২ সালের সংগীত সালতামামিতে। তৈরি করেছেন মাহমুদ মানজুর...
ব্যানার হালচাল:
বছর জুড়ে এবারও প্রায় শ’তিনেক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। যে অ্যালবামগুলোর বেশির ভাগই প্রকাশ করেছে জি-সিরিজ, লেজার ভিশন, ডেডলাইন মিউজিক, সিডি চয়েজ এবং সংগীতা। এর বাইরেও এ বছরের উল্লেখযোগ্য দিক হলো বেশ ক’জন শিল্পী ব্যক্তিগত ব্যানার থেকে অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, ট্রাডিশনাল প্রযোজনা-প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা। তবে এসব ব্যক্তিগত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা বরাবরের মতো এবছরও বেশ করুণ বলেই প্রমাণিত হয়েছে। আর গেল বছরের মতো এবারও অডিও অ্যালবাম প্রকাশে সবচেয়ে এগিয়ে আছে জি-সিরিজ/অগ্নিবীণা প্রতিষ্ঠান যুগল। এই দুই ব্যানার থেকে সর্বাধিক সংখ্যক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে এবার। এরমধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্রের তারকাবহুল গানের অ্যালবাম ‘ছায়া-ছবি’, প্রিন্স মাহমুদের ‘অপরাজিতা’, বাপ্পার ‘বেঁচে থাক সবুজ’, মিমির ‘আড়াল’, লিজার ‘লিজা পার্ট-১’ প্রভৃতি। অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতা চলতি বছরে এসে প্রকাশনা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এই ব্যানার থেকে এবার একটি উল্লেখযোগ্য অ্যালবামও প্রকাশ পায়নি। দুঃখজনক হলেও ঘটনাটি সত্যি। এদিকে দেশের আরেক তারকা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের অবস্থা এ বছরে এসে খুব বেশি অবনতি না ঘটলেও, গেল বছরের মতো এবারও সিংহভাগ তরুণ শিল্পী-সংগীত পরিচালকদের অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে বেলালের ‘আলাপন’, পড়শীর ‘পড়শী-২’ প্রভৃতি। অন্যদিকে চলতি বছরে এসে অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ডেডলাইনের অবস্থা আপাতদৃষ্টিতে বছর জুড়ে ছিল বেশ রমরমা। তবে অর্থনৈতিক বিচেনায় নয়। এই বছরে প্রকাশিত সব হাই প্রোফাইল তারকা অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে এ ব্যানার থেকে। যদিও একটি অ্যালবামও বাণিজ্যিকভাবে সে অর্থে সফল নয়। এ বছর এই ব্যানার থেকে প্রকাশ পেয়েছে এলআরবি’র ‘যুদ্ধ’, ন্যান্সির ‘রঙ’, হাবিবের সংগীতে চলচ্চিত্রের গানের অ্যালবাম ‘তুমি সন্ধ্যার ও মেঘমালা’, একক ‘স্বাধীন’, হৃদয় খানের ‘হৃদয় মিক্স-৩’, ওয়ারফেইজের ‘সত্য’, কিশোর-সাব্বিরের সংগীতে চলচ্চিত্রের গানের অ্যালবাম ‘পায়রা’, কণার ‘সিম্পলি কণা’, কোনালের ‘কোনালস জাদু’র মতো দামী অ্যালবামগুলো। আর এসব মিলিয়ে ডেডলাইন মিউজিক চলতি বছরে সংখ্যার বিচারে পিছিয়ে থাকলেও অ্যালবামের নাম এবং মানের বিচারে বছর জুড়েই ছিল শীর্ষে। আরেক নবীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি চয়েজ থেকেও এবার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। এরমধ্যে তৌসিফের ‘আমন্ত্রণ’, নাওমির ‘নাওমি’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এর বাইরেও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ব্যানার থেকে চলতি বছরে প্রকাশ পেয়েছে প্রচুর নবীন-সৌখিন-মেধাবী শিল্পীর অ্যালবাম।
মর্মস্পর্শী গুজব:
নভেম্ববরের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন গিটার লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু। সেখানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) কার্ডিওলজিস্ট আবদুল্লাহ-আল জামিলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন টানা প্রায় ১৫ দিন। আর এই ১৫ দিনের হাসপাতাল জীবনে নানা মাত্রিক উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে সংগীতাঙ্গন তথা পুরো দেশের সংগীত পিপাসুদের মনে। যার কারণ, আইয়ুব বাচ্চু চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত পাঁচ বার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, একটি চিহ্নিত মহল সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই এই মর্মস্পর্শী গুজবটি ছড়িয়েছেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, সকল উৎকণ্ঠা আর গুজবের অবসান ঘটিয়ে দেশের লিভিং লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু এখন বেশ সুস্থ অবস্থায় নিজ বাসায় বিশ্রামে আছেন।
মিছে আশ্বাস:
চলতি বছরে কথা দিয়ে কথা রাখেননি পার্থ বড়ুয়া, আসিফ আকবর, কানিজ, বালাম এবং মিলা। বছর জুড়ে এই ৫ তারকা নিজেদের নতুন অ্যালবাম প্রকাশের ফুলঝুরি ফুটিয়েছেন। বারবার প্রকাশ করেছেন অ্যালবাম প্রকাশের দিন-ক্ষণ। বছরের প্রথম থেকে দেয়া এমন আশ্বাসের বিপরীতে বছর শেষে ফলাফল শূন্য। একজনও প্রকাশ করতে পারেননি নিজেদের নতুন অ্যালবাম, রাখতে পারেননি কথা। উপস্থাপন করতে পারেননি কথা দিয়ে কথা না রাখার যৌক্তিক যুক্তি।
বেড়েছে কনসার্ট:
গেল কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে ইনডোর এবং ওপেন এয়ার কনসার্টের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। চলতি বছরের প্রথম থেকে সর্বশেষ ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় শতাধিক উল্লেখযোগ্য কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ সফলতার সঙ্গে। এর মধ্যে পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস ছাড়াও এ বছর বাংলাদেশের এক নম্বর কনসার্ট ভেন্যু হিসেবে পরিচিত আর্মি স্টেডিয়ামে বেশ ক’টি বড়মাপের কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বছরের সেরা কনসার্ট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ২৯শে নভেম্বর থেকে আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘বেঙ্গল আইটিসি এসআরএ উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১২’। এই উৎসবে অংশ নিতে শুধু ভারত থেকেই এসেছেন মোট ৮১ জন শিল্পী। একই ভেন্যুতে প্রথমবারের মতো গান করেছেন উপমহাদেশের দুই প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আশা ভোঁসলে ও রুনা লায়লা। ৯ই মার্চ ‘ইটারনাল আশা লাইভ ইন ঢাকা’ নামের এ কনসার্টটি ছিল এক কথায় অনবদ্য। আর্মি স্টেডিয়ামের এই কনসার্টের বাইরে বড়মাপের কনসার্টের মধ্যে রয়েছে ২০শে ডিসেম্বর রমনা পার্কে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ‘বাংলালিংক বাংলাদেশ উৎসব’। এদিকে ৭ই ডিসেম্বর খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ‘ইউএনএফপিএ-বামবা ইয়ুথ কনসার্ট ২০১২’। এছাড়াও বছরের প্রথম কনসার্ট হিসেবে জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘লিড ২০১২’ শীর্ষক সার্ক শীর্ষক তারকাদের অংশগ্রহণে কনসার্ট। রূপসী বাংলা হোটেলে ব্যান্ড মাইলসের ৩০ বছর উদযাপনে গ্রামীণফোনের মেগা কনসার্ট। এদিকে গতকাল চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুল তলায় অনুষ্ঠিত হয় ‘সঞ্জীব উৎসব’। আর বছরের শেষ উল্লেখযোগ্য কনসার্ট হিসেবে ২৮শে ডিসেম্বর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নগর বাউল, সনু নিগম এবং সাফকাত আলীর মেগা কনসার্ট। সবমিলিয়ে এ বছর ওপেন এয়ার এবং ইনডোর কনসার্ট নতুন জীবন পেয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে বিগত বছরের মতো এ বছরেও দেশের প্রায় ২০টি টিভি চ্যানেল জুড়ে ছিল ফোনোলাইভ স্টুডিও কনসার্টের আধিক্য।
সীমানা পেরিয়ে:
এ বছর আবারও দেশ পেরিয়ে মুম্বই চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন জেমস। জুন মাসে অনেকটা নীরবেই ‘ওয়ার্নিং’ ছবির ‘বেবাসী’ শীর্ষক গানে কণ্ঠ দিয়ে আসেন তিনি। এ ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার ধারাবাহিক ‘রোশনী’র শীর্ষ সংগীতেও ভারতীয় শানের সঙ্গে যৌথভাবে কণ্ঠ দেন জেমস। এদিকে প্লে-ব্যাকের জন্য প্রথমবারের মতো দেশের গণ্ডি পেরুলেন আরেক ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। দেবাদিত্য পরিচালিত কলকাতার ভিন্ন মাত্রার ছবি ‘৮:০৮ বঙ্গ লোকাল’ এর জন্য তিনি একটি গানে কণ্ঠ দেন। গানটির সুর করেছেন তন্ময় বোস। অন্যদিকে শুভ্রদেবও বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা দেন একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনার।
তারুণ্যের অগ্রযাত্রা:
চলতি বছরের পুরোটাই ছিল তুরুণদের অগ্রযাত্রায় মুখর। কণ্ঠে, সংগীতে, সুরে, অ্যালবামে এবং স্টেজ শোতে- একঝাঁক তরুণ এখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশীয় সংগীতের পতাকা হাতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হিসেবে চলে আছে বিভিন্ন রিয়েলিটি শো থেকে আগত তরুণ তুর্কীদের। যেমন ক্লোজআপ ওয়ানের কিশোর, পুলক, মাহাদী, সাব্বির, রন্টি, মুহিন, শশী, লিজা প্রমুখ। সেরা কণ্ঠের ইমরান, কোনাল, মনির প্রমুখ। ক্ষুদে গানরাজের পড়শী, নাওমী, প্রান্তি প্রমুখ। অন্যদিকে স্বতন্ত্র জায়গা থেকে বেলাল খান, পারভেজ, রিজভী ওয়াহিদ, এলিটা, পূজা, জয়, ইলিয়াসসহ আরও অনেক তরুণ-তরুণী। এর মধ্যে চলমান হাবিব-হৃদয় খান-আরফিন রুমির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণ সম্ভাবনাময় সুরকার-সংগীত পরিচালক হিসেবে চলতি বছরে দারুণ আশা জাগিয়েছেন সুমন কল্যাণ, বেলাল খান, কিশোর, ইমরান, সাব্বির এবং শফিক তুহিন। যারা চলতি বছরে অডিও অ্যালবামের পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেও। বিশ্লেষকদের মতে এই একঝাঁক তরুণ তুর্কীই ঘুরে ফিরে চলতি বছরের সংগীত বাজারটাকে সচল রেখেছেন স্ব স্ব অবস্থান থেকে। যেখানে বছর জুড়ে সিনিয়র তারকা শিল্পীদের অবদান খুবই নগণ্য।
তিন দুর্ঘটনা:
চলতি বছরের শুরুটা বেশ স্বচ্ছ এবং ধীরস্থির গতিতে এগুলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে বেশ অস্থির হয়ে ওঠে নানা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে শুরুটা হয় ন্যান্সির সংসার ভাঙনের খবর দিয়ে। সম্ভবত ন্যান্সিই প্রথম কোন তারকা শিল্পী যিনি স্বেচ্ছায় সংবাদ মাধ্যমে জানান দিয়েছেন তার বিচ্ছেদের ঘটনা। ন্যান্সির ভাঙনের উত্তাপ এবং বিস্ময় কাটতে না কাটতেই নতুন দুর্ঘটনার আভাস মিলে সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন এবং অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহর সংসার ঘিরে। এই দুর্ঘটনার আলামত স্পষ্ট না হতেই আরফিন রুমির দ্বিতীয় বিয়ে কেন্দ্রিক ঘটনা দিয়ে সংগীতাঙ্গনে সৃষ্টি হয় তুলকালাম অবস্থা। প্রথমে অস্বীকার করলেও রুমি স্বীকার করেন, প্রথম স্ত্রী অনন্যার অনুমতি সাপেক্ষে আমেরিকা প্রবাসী কামরুন নেসাকে বিয়ে ঘরে তোলার বিষয়টি। রুমির বিয়েকেন্দ্রিক নাটকের অবসান ঘটতেই বছরের শেষ এবং সর্বোচ্চ দুর্ঘটনার জন্ম দেন শওকত আলী ইমন। প্রেমিকা জিনাতের মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন লজ্জাজনকভাবে। আসামি হন নারী নির্যতন এবং মাদকের। এর ফাঁকে অভিযুক্তকারী প্রেমিকা জিনাতের সঙ্গে রমনা থানাতেই বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় এই সংগীত পরিচালক। সব মিলিয়ে বছরের শেষাংশে এসে ন্যান্সি-রুমি এবং ইমনের ধারাবাহিক তিন ঘটনায় বছর জুড়ে সংগীতাঙ্গনের সব অর্জন ধুয়ে মুছে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সেরা দুই মুখ:
সংগীতাঙ্গনে বছরের সেরা দুই মুখ হিসেবে এবার উঠে এসেছে হাবিব এবং ন্যান্সির নাম। একজন সংখ্যার বিচারে। আরেকজন সফলতার বিচারে। মজার বিষয় হলো এই দু’জনেই বছরের শুরুটা শুরু করেন একসঙ্গে এক অ্যালবামের মধ্য দিয়ে। সেটি হলো হাবিবের সংগীতে ন্যান্সির একক ‘রঙ’। যে অ্যালবামে হাবিব নিজেও কণ্ঠ দিয়েছেন একটি গানে। ‘ঝরা পাতা’ শীর্ষক এ গানটি ভালই জনপ্রিয়তা পায়। তবে চলতি বছরে সফলতা নয়, বরং সংখ্যার বিচারে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন হাবিব ওয়াহিদ। বছর জুড়েই এবার প্রকাশ পেয়েছে তার গান। প্রথমে প্রকাশ পায় ন্যান্সির একক ‘রঙ’। এরপর প্রকাশ পায় চলচ্চিত্রের গানের অ্যালবাম ‘তুমি সন্ধ্যারও মেঘমালা’। সব শেষে প্রকাশ পায় একক ‘স্বাধীন’। এর মধ্যে বছর জুড়ে হাবিবের একটি গানও হিট এর তালিকায় উঠতে সক্ষম হয়নি। তবে ‘ঝরাপাতা’ এবং ‘অন্তহীন’ শিরোনামের দু’টি গান মৃদু শ্রোতা সমর্থন পায় অল্প সময়ের জন্য। যেটা হাবিবের সফল ক্যারিয়ারের জন্য বড়ই অপ্রতুল এবং অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন অনেকে। অন্যদিক চলতি বছরে ন্যান্সি হাবিবের বাইরে এসে প্রচুর গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। কোন গান সুপার হিট না হলেও হিট হয়েছে বেশ কিছু। সফলতার বিচারে ন্যান্সি এগিয়ে আছেন যে কোনো নারী শিল্পীর চেয়ে। যার প্রমাণ মিলে প্রিন্স মাহমুদের ‘ভুবন ডাঙ্গার হাসি’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘কানামাছি’, শফিক তুহিনের ‘পাগলামি’ এবং হাবিবের ‘ঝরাপাতা’সহ আরও বেশ কিছু গানের মধ্য দিয়ে।
প্রতিভা অন্বেষণের হিড়িক:
মাঝখানে খানিক বিরতি নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে শুরু হয়েছে ফের সংগীতভিত্তিক প্রতিভা অন্বেষণ প্রক্রিয়ার হিড়িক। এ বছর চ্যানেল আই এর ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ এবং ‘ক্ষুদে গানরাজ’ ইভেন্টের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে এনটিভিতে ‘ক্লোজআপ ওয়ান’, চ্যানেল নাইনে ‘পাওয়ার ভয়েজ’ এবং মাছরাঙ্গায় ‘রবি সেরা প্রতিভা’। শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে এসএ টিভি’র জন্য ‘বাংলাদেশ আইডল’। মোট মিলিয়ে চলতি বছরটা সংগীত ভিত্তিক প্রতিভা অন্বেষণের নতুন জোয়ার শুরু হয়েছে। যার ফসল মিলবে নতুন বছরে।
জন্ম-মৃত্যু-প্রেম-বিয়ে:
বছরের প্রথম দিন কন্যা সন্তানের মা হন ক্লোজআপ তারকা সালমা। এরপর পুত্র সন্তানের বাবা হন সুমন কল্যাণ ও কন্যা সন্তানের বাবা হন ‘ঘুড়ি’ খ্যাত লুৎফর হাসান। আর ২৪শে ডিসেম্বর পুত্র সন্তানের বাবা হন হাবিব ওয়াহিদ। মাঝখানে দ্বিতীয় সন্তানের জনক হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করেন মাইলস ব্যান্ডের শাফিন আহমেদ। রমনা থানায় নাটকীয়ভাবে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। অন্যদিকে বেশ অনাড়ম্বর পূর্ণ আয়োজনে পারিবারিকভাবে এ বছর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন ক্লোজআপ তারকা সাব্বির এবং রন্টি দাস। আর বছরের শেষ প্রান্তে এসে অকালে মৃত্যুবরণ করেন তরুণ শিল্পী হাসিব। এদিকে মডেল কন্যা সুজানা’র প্রেমের টানে বাবা-মায়ের ঘর ত্যাগ করলেন হৃদয় খান। অন্যদিকে সমনুর মনির কোনাল এবং পৃথ্বিরাজের প্রেমের বিষয়টিও এ বছর স্পষ্ট রূপ নেয়।
উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম:
‘স্টুডিও সম্পর্ক’ নামে গানের স্টুডিও গড়েছেন রিংকু। ‘গল্প’ নাম দিয়ে মুহিন গড়েছেন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। পড়শী গড়েছেন ব্যান্ড ‘বর্ণমালা’। চ্যানেল আই ক্যাফেটরিয়াতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের জন্য দু’টি টেবিল বরাদ্দ দিয়েছে চ্যানেল আই। এ বছর নিজস্ব বাড়ি নির্মাণ করেন কুমার বিশ্বজিৎ (ঢাকায়) এবং ন্যান্সি (নেত্রকোনায়)। কনকচাঁপার কবিতার বই ও আবৃত্তি অ্যালবাম ‘মুখোমুখি যোদ্ধা’ প্রকাশ পেয়েছে একুশে বই মেলায়। ‘ছায়া-ছবি’ চলচ্চিত্রের একটি গানে অংশ নিয়েছেন আরফিন রুমি ও শহীদ। বিয়ে কেন্দ্রিক জটিলতার কারণে ব্যান্ড ‘দূরবীন’ থেকে বাদ পড়েছেন আরফিন রুমি। নিজের নতুন এককে গান লিখেছেন বালাম। মিমির গানের ভিডিও নির্মাণ করেছেন হৃদয় খান। ৫৫ ব্যান্ডের গান নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে দূরে’র ‘হাতিয়ার’। চলতি বছরে বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন সৈয়দ আবদুল হাদী, আইয়ুব বাচ্চু, শাফিন আহমেদ, প্রীতম, আঁখি আলমগীর, পুতুল, এলিটা, সাব্বির, দিনাত জাহান মুন্নী, কোনাল, জয়, নিশীতা, তিশমা, পুতুল, আর্নিক, বাপ্পা মজুমদার, শফিক তুহিন প্রমুখ। কুষ্টিয়ায় এস,আই টুটুল গড়েছেন স্কুল ‘ধ্রুবতারা একাডেমি’। প্রথমবারের মতো বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছেন আঁখি আলমগীর।
সেরা ১২ অ্যালবাম:
সে অর্থে জনপ্রিয়তার মাপে নয়, বরং গানের মানের বিচারে এ বছর অন্তত এক ডজন অ্যালবাম সংগীতাঙ্গনের মুখ উজ্জ্বল করেছে নানা মাত্রায়। এর মধ্যে রয়েছে প্রিন্স মাহমুদের কথা-সুরে ‘অপরাজিতা’, আরফিন রুমির সংগীতে ‘ছায়া-ছবি’, ন্যান্সি’র ‘রঙ’, এলআরবি’র ‘যুদ্ধ’, জুলফিকার রাসেলের কথায় ‘পরস্পর-২’, পড়শীর একক ‘পড়শী-২’, শফিক তুহিনের কথা-সুরে ‘পাগলামী’, বাপ্পা’র ‘বেঁচে থাক সবুজ’, হাবিবের সংগীত পরিচালনায় ‘তুমি সন্ধ্যারও মেঘমালা’, কণার ‘সিম্পলি কণা’, প্রীতমের ‘ভালো থেকো’, কিশোর-সাব্বিরের সংগীত পরিচালনায় ‘পায়রা’ এবং অর্ণবের ‘আধেক ঘুমে’ প্রভৃতি।
সেরা ১২ গান:
এ বছরে সুপার হিট গান একটিও নেই। তবে মৃদু হিট হয়েছে বেশ কিছু গান। এর মধ্যে রয়েছে, হাবিব-ন্যান্সির ‘ঝরাপাতা’, শফিক তুহিন-ন্যান্সির ‘পাগলামী’, তপু-ন্যান্সির ‘ভুবন ডাঙ্গার হাসি’, রিজভী ওয়াহিদের ‘চোখেরই পলকে’, ইমরান-পূজা’র ‘দূরে দূরে’, কিশোরের ‘একা একাই ভালবাসি’, হাবিবের ‘অন্তহীন’, আরফিন রুমি-পড়শীর ‘পথ জানা নেই’, সুমন কল্যাণের ‘বোকা প্রেমিকের দল’, ন্যান্সি-লুৎফর হাসানের ‘ভাবনায় ভাসি ডুবি ’, প্রীতমের ‘কার জন্য’ এবং বেলাল খানের ‘কাটেনা যে বেলা’।
- মানবজমিন ২৬ ডিসেম্বর ২০১২
দেখলে যেমন অনুভূতি হয়, ঠিক তেমনটি। বছরের প্রথমাংশে বেশ কিছু মানসম্মত তারকা
অ্যালবাম প্রকাশ, উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি কনসার্ট আয়োজন আর সংগীত সংশ্লিষ্টদের নানা মাত্রিক উদ্যোগে বছর জুড়ে আলোর প্রত্যাশা করেছিল সবাই। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা যতই উল্টাতে লাগলো, ততই নিরাশার লু হাওয়া বইতে শুরু করলো সংগীতাঙ্গনে-সংগীত প্রিয়দের মনে। ঘটলো একের পর এক বিব্রতকর কিংবা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সেই ধারাবাহিকতায় বছর শেষে সংগীতাঙ্গন নিমজ্জিত হলো ভৌতিক অন্ধকারে। যে নিকশ কালো অন্ধকারে সে অর্থে মশাল জ্বালাতে পারেনি অনেক মানসম্মত অ্যালবাম। তাই সংগীত বিশ্লেষকদের মতে বছরের শেষাংশে এসে গুটি কয় তারকা শিল্পীর ব্যক্তিগত ঘটনার কারণে পুরো বছরের তিল তিল করে গড়া সৃষ্টিগুলো নষ্ট হয়েছে। এক কথায় চলতি বছরে সংগীতাঙ্গনের সালতামামি দাঁড়িয়েছে- এক গামলা দুধের মধ্যে এক বিচি তেঁতুল নীরবে ছেড়ে দেয়ার মতোই। বছরব্যাপী দুধ আর তেঁতুলের এই গল্পটাই ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে ২০১২ সালের সংগীত সালতামামিতে। তৈরি করেছেন মাহমুদ মানজুর...
ব্যানার হালচাল:
বছর জুড়ে এবারও প্রায় শ’তিনেক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। যে অ্যালবামগুলোর বেশির ভাগই প্রকাশ করেছে জি-সিরিজ, লেজার ভিশন, ডেডলাইন মিউজিক, সিডি চয়েজ এবং সংগীতা। এর বাইরেও এ বছরের উল্লেখযোগ্য দিক হলো বেশ ক’জন শিল্পী ব্যক্তিগত ব্যানার থেকে অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, ট্রাডিশনাল প্রযোজনা-প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা। তবে এসব ব্যক্তিগত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা বরাবরের মতো এবছরও বেশ করুণ বলেই প্রমাণিত হয়েছে। আর গেল বছরের মতো এবারও অডিও অ্যালবাম প্রকাশে সবচেয়ে এগিয়ে আছে জি-সিরিজ/অগ্নিবীণা প্রতিষ্ঠান যুগল। এই দুই ব্যানার থেকে সর্বাধিক সংখ্যক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে এবার। এরমধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্রের তারকাবহুল গানের অ্যালবাম ‘ছায়া-ছবি’, প্রিন্স মাহমুদের ‘অপরাজিতা’, বাপ্পার ‘বেঁচে থাক সবুজ’, মিমির ‘আড়াল’, লিজার ‘লিজা পার্ট-১’ প্রভৃতি। অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতা চলতি বছরে এসে প্রকাশনা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এই ব্যানার থেকে এবার একটি উল্লেখযোগ্য অ্যালবামও প্রকাশ পায়নি। দুঃখজনক হলেও ঘটনাটি সত্যি। এদিকে দেশের আরেক তারকা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের অবস্থা এ বছরে এসে খুব বেশি অবনতি না ঘটলেও, গেল বছরের মতো এবারও সিংহভাগ তরুণ শিল্পী-সংগীত পরিচালকদের অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে বেলালের ‘আলাপন’, পড়শীর ‘পড়শী-২’ প্রভৃতি। অন্যদিকে চলতি বছরে এসে অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ডেডলাইনের অবস্থা আপাতদৃষ্টিতে বছর জুড়ে ছিল বেশ রমরমা। তবে অর্থনৈতিক বিচেনায় নয়। এই বছরে প্রকাশিত সব হাই প্রোফাইল তারকা অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে এ ব্যানার থেকে। যদিও একটি অ্যালবামও বাণিজ্যিকভাবে সে অর্থে সফল নয়। এ বছর এই ব্যানার থেকে প্রকাশ পেয়েছে এলআরবি’র ‘যুদ্ধ’, ন্যান্সির ‘রঙ’, হাবিবের সংগীতে চলচ্চিত্রের গানের অ্যালবাম ‘তুমি সন্ধ্যার ও মেঘমালা’, একক ‘স্বাধীন’, হৃদয় খানের ‘হৃদয় মিক্স-৩’, ওয়ারফেইজের ‘সত্য’, কিশোর-সাব্বিরের সংগীতে চলচ্চিত্রের গানের অ্যালবাম ‘পায়রা’, কণার ‘সিম্পলি কণা’, কোনালের ‘কোনালস জাদু’র মতো দামী অ্যালবামগুলো। আর এসব মিলিয়ে ডেডলাইন মিউজিক চলতি বছরে সংখ্যার বিচারে পিছিয়ে থাকলেও অ্যালবামের নাম এবং মানের বিচারে বছর জুড়েই ছিল শীর্ষে। আরেক নবীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি চয়েজ থেকেও এবার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। এরমধ্যে তৌসিফের ‘আমন্ত্রণ’, নাওমির ‘নাওমি’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এর বাইরেও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ব্যানার থেকে চলতি বছরে প্রকাশ পেয়েছে প্রচুর নবীন-সৌখিন-মেধাবী শিল্পীর অ্যালবাম।
মর্মস্পর্শী গুজব:
নভেম্ববরের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন গিটার লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু। সেখানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) কার্ডিওলজিস্ট আবদুল্লাহ-আল জামিলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন টানা প্রায় ১৫ দিন। আর এই ১৫ দিনের হাসপাতাল জীবনে নানা মাত্রিক উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে সংগীতাঙ্গন তথা পুরো দেশের সংগীত পিপাসুদের মনে। যার কারণ, আইয়ুব বাচ্চু চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত পাঁচ বার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, একটি চিহ্নিত মহল সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই এই মর্মস্পর্শী গুজবটি ছড়িয়েছেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, সকল উৎকণ্ঠা আর গুজবের অবসান ঘটিয়ে দেশের লিভিং লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু এখন বেশ সুস্থ অবস্থায় নিজ বাসায় বিশ্রামে আছেন।
মিছে আশ্বাস:
চলতি বছরে কথা দিয়ে কথা রাখেননি পার্থ বড়ুয়া, আসিফ আকবর, কানিজ, বালাম এবং মিলা। বছর জুড়ে এই ৫ তারকা নিজেদের নতুন অ্যালবাম প্রকাশের ফুলঝুরি ফুটিয়েছেন। বারবার প্রকাশ করেছেন অ্যালবাম প্রকাশের দিন-ক্ষণ। বছরের প্রথম থেকে দেয়া এমন আশ্বাসের বিপরীতে বছর শেষে ফলাফল শূন্য। একজনও প্রকাশ করতে পারেননি নিজেদের নতুন অ্যালবাম, রাখতে পারেননি কথা। উপস্থাপন করতে পারেননি কথা দিয়ে কথা না রাখার যৌক্তিক যুক্তি।
বেড়েছে কনসার্ট:
গেল কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে ইনডোর এবং ওপেন এয়ার কনসার্টের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। চলতি বছরের প্রথম থেকে সর্বশেষ ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় শতাধিক উল্লেখযোগ্য কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ সফলতার সঙ্গে। এর মধ্যে পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস ছাড়াও এ বছর বাংলাদেশের এক নম্বর কনসার্ট ভেন্যু হিসেবে পরিচিত আর্মি স্টেডিয়ামে বেশ ক’টি বড়মাপের কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বছরের সেরা কনসার্ট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ২৯শে নভেম্বর থেকে আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘বেঙ্গল আইটিসি এসআরএ উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১২’। এই উৎসবে অংশ নিতে শুধু ভারত থেকেই এসেছেন মোট ৮১ জন শিল্পী। একই ভেন্যুতে প্রথমবারের মতো গান করেছেন উপমহাদেশের দুই প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আশা ভোঁসলে ও রুনা লায়লা। ৯ই মার্চ ‘ইটারনাল আশা লাইভ ইন ঢাকা’ নামের এ কনসার্টটি ছিল এক কথায় অনবদ্য। আর্মি স্টেডিয়ামের এই কনসার্টের বাইরে বড়মাপের কনসার্টের মধ্যে রয়েছে ২০শে ডিসেম্বর রমনা পার্কে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ‘বাংলালিংক বাংলাদেশ উৎসব’। এদিকে ৭ই ডিসেম্বর খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ‘ইউএনএফপিএ-বামবা ইয়ুথ কনসার্ট ২০১২’। এছাড়াও বছরের প্রথম কনসার্ট হিসেবে জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘লিড ২০১২’ শীর্ষক সার্ক শীর্ষক তারকাদের অংশগ্রহণে কনসার্ট। রূপসী বাংলা হোটেলে ব্যান্ড মাইলসের ৩০ বছর উদযাপনে গ্রামীণফোনের মেগা কনসার্ট। এদিকে গতকাল চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুল তলায় অনুষ্ঠিত হয় ‘সঞ্জীব উৎসব’। আর বছরের শেষ উল্লেখযোগ্য কনসার্ট হিসেবে ২৮শে ডিসেম্বর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নগর বাউল, সনু নিগম এবং সাফকাত আলীর মেগা কনসার্ট। সবমিলিয়ে এ বছর ওপেন এয়ার এবং ইনডোর কনসার্ট নতুন জীবন পেয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে বিগত বছরের মতো এ বছরেও দেশের প্রায় ২০টি টিভি চ্যানেল জুড়ে ছিল ফোনোলাইভ স্টুডিও কনসার্টের আধিক্য।
সীমানা পেরিয়ে:
এ বছর আবারও দেশ পেরিয়ে মুম্বই চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন জেমস। জুন মাসে অনেকটা নীরবেই ‘ওয়ার্নিং’ ছবির ‘বেবাসী’ শীর্ষক গানে কণ্ঠ দিয়ে আসেন তিনি। এ ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার ধারাবাহিক ‘রোশনী’র শীর্ষ সংগীতেও ভারতীয় শানের সঙ্গে যৌথভাবে কণ্ঠ দেন জেমস। এদিকে প্লে-ব্যাকের জন্য প্রথমবারের মতো দেশের গণ্ডি পেরুলেন আরেক ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। দেবাদিত্য পরিচালিত কলকাতার ভিন্ন মাত্রার ছবি ‘৮:০৮ বঙ্গ লোকাল’ এর জন্য তিনি একটি গানে কণ্ঠ দেন। গানটির সুর করেছেন তন্ময় বোস। অন্যদিকে শুভ্রদেবও বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা দেন একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনার।
তারুণ্যের অগ্রযাত্রা:
চলতি বছরের পুরোটাই ছিল তুরুণদের অগ্রযাত্রায় মুখর। কণ্ঠে, সংগীতে, সুরে, অ্যালবামে এবং স্টেজ শোতে- একঝাঁক তরুণ এখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশীয় সংগীতের পতাকা হাতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হিসেবে চলে আছে বিভিন্ন রিয়েলিটি শো থেকে আগত তরুণ তুর্কীদের। যেমন ক্লোজআপ ওয়ানের কিশোর, পুলক, মাহাদী, সাব্বির, রন্টি, মুহিন, শশী, লিজা প্রমুখ। সেরা কণ্ঠের ইমরান, কোনাল, মনির প্রমুখ। ক্ষুদে গানরাজের পড়শী, নাওমী, প্রান্তি প্রমুখ। অন্যদিকে স্বতন্ত্র জায়গা থেকে বেলাল খান, পারভেজ, রিজভী ওয়াহিদ, এলিটা, পূজা, জয়, ইলিয়াসসহ আরও অনেক তরুণ-তরুণী। এর মধ্যে চলমান হাবিব-হৃদয় খান-আরফিন রুমির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণ সম্ভাবনাময় সুরকার-সংগীত পরিচালক হিসেবে চলতি বছরে দারুণ আশা জাগিয়েছেন সুমন কল্যাণ, বেলাল খান, কিশোর, ইমরান, সাব্বির এবং শফিক তুহিন। যারা চলতি বছরে অডিও অ্যালবামের পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেও। বিশ্লেষকদের মতে এই একঝাঁক তরুণ তুর্কীই ঘুরে ফিরে চলতি বছরের সংগীত বাজারটাকে সচল রেখেছেন স্ব স্ব অবস্থান থেকে। যেখানে বছর জুড়ে সিনিয়র তারকা শিল্পীদের অবদান খুবই নগণ্য।
তিন দুর্ঘটনা:
চলতি বছরের শুরুটা বেশ স্বচ্ছ এবং ধীরস্থির গতিতে এগুলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে বেশ অস্থির হয়ে ওঠে নানা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে শুরুটা হয় ন্যান্সির সংসার ভাঙনের খবর দিয়ে। সম্ভবত ন্যান্সিই প্রথম কোন তারকা শিল্পী যিনি স্বেচ্ছায় সংবাদ মাধ্যমে জানান দিয়েছেন তার বিচ্ছেদের ঘটনা। ন্যান্সির ভাঙনের উত্তাপ এবং বিস্ময় কাটতে না কাটতেই নতুন দুর্ঘটনার আভাস মিলে সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন এবং অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহর সংসার ঘিরে। এই দুর্ঘটনার আলামত স্পষ্ট না হতেই আরফিন রুমির দ্বিতীয় বিয়ে কেন্দ্রিক ঘটনা দিয়ে সংগীতাঙ্গনে সৃষ্টি হয় তুলকালাম অবস্থা। প্রথমে অস্বীকার করলেও রুমি স্বীকার করেন, প্রথম স্ত্রী অনন্যার অনুমতি সাপেক্ষে আমেরিকা প্রবাসী কামরুন নেসাকে বিয়ে ঘরে তোলার বিষয়টি। রুমির বিয়েকেন্দ্রিক নাটকের অবসান ঘটতেই বছরের শেষ এবং সর্বোচ্চ দুর্ঘটনার জন্ম দেন শওকত আলী ইমন। প্রেমিকা জিনাতের মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন লজ্জাজনকভাবে। আসামি হন নারী নির্যতন এবং মাদকের। এর ফাঁকে অভিযুক্তকারী প্রেমিকা জিনাতের সঙ্গে রমনা থানাতেই বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় এই সংগীত পরিচালক। সব মিলিয়ে বছরের শেষাংশে এসে ন্যান্সি-রুমি এবং ইমনের ধারাবাহিক তিন ঘটনায় বছর জুড়ে সংগীতাঙ্গনের সব অর্জন ধুয়ে মুছে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সেরা দুই মুখ:
সংগীতাঙ্গনে বছরের সেরা দুই মুখ হিসেবে এবার উঠে এসেছে হাবিব এবং ন্যান্সির নাম। একজন সংখ্যার বিচারে। আরেকজন সফলতার বিচারে। মজার বিষয় হলো এই দু’জনেই বছরের শুরুটা শুরু করেন একসঙ্গে এক অ্যালবামের মধ্য দিয়ে। সেটি হলো হাবিবের সংগীতে ন্যান্সির একক ‘রঙ’। যে অ্যালবামে হাবিব নিজেও কণ্ঠ দিয়েছেন একটি গানে। ‘ঝরা পাতা’ শীর্ষক এ গানটি ভালই জনপ্রিয়তা পায়। তবে চলতি বছরে সফলতা নয়, বরং সংখ্যার বিচারে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন হাবিব ওয়াহিদ। বছর জুড়েই এবার প্রকাশ পেয়েছে তার গান। প্রথমে প্রকাশ পায় ন্যান্সির একক ‘রঙ’। এরপর প্রকাশ পায় চলচ্চিত্রের গানের অ্যালবাম ‘তুমি সন্ধ্যারও মেঘমালা’। সব শেষে প্রকাশ পায় একক ‘স্বাধীন’। এর মধ্যে বছর জুড়ে হাবিবের একটি গানও হিট এর তালিকায় উঠতে সক্ষম হয়নি। তবে ‘ঝরাপাতা’ এবং ‘অন্তহীন’ শিরোনামের দু’টি গান মৃদু শ্রোতা সমর্থন পায় অল্প সময়ের জন্য। যেটা হাবিবের সফল ক্যারিয়ারের জন্য বড়ই অপ্রতুল এবং অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন অনেকে। অন্যদিক চলতি বছরে ন্যান্সি হাবিবের বাইরে এসে প্রচুর গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। কোন গান সুপার হিট না হলেও হিট হয়েছে বেশ কিছু। সফলতার বিচারে ন্যান্সি এগিয়ে আছেন যে কোনো নারী শিল্পীর চেয়ে। যার প্রমাণ মিলে প্রিন্স মাহমুদের ‘ভুবন ডাঙ্গার হাসি’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘কানামাছি’, শফিক তুহিনের ‘পাগলামি’ এবং হাবিবের ‘ঝরাপাতা’সহ আরও বেশ কিছু গানের মধ্য দিয়ে।
প্রতিভা অন্বেষণের হিড়িক:
মাঝখানে খানিক বিরতি নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে শুরু হয়েছে ফের সংগীতভিত্তিক প্রতিভা অন্বেষণ প্রক্রিয়ার হিড়িক। এ বছর চ্যানেল আই এর ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ এবং ‘ক্ষুদে গানরাজ’ ইভেন্টের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে এনটিভিতে ‘ক্লোজআপ ওয়ান’, চ্যানেল নাইনে ‘পাওয়ার ভয়েজ’ এবং মাছরাঙ্গায় ‘রবি সেরা প্রতিভা’। শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে এসএ টিভি’র জন্য ‘বাংলাদেশ আইডল’। মোট মিলিয়ে চলতি বছরটা সংগীত ভিত্তিক প্রতিভা অন্বেষণের নতুন জোয়ার শুরু হয়েছে। যার ফসল মিলবে নতুন বছরে।
জন্ম-মৃত্যু-প্রেম-বিয়ে:
বছরের প্রথম দিন কন্যা সন্তানের মা হন ক্লোজআপ তারকা সালমা। এরপর পুত্র সন্তানের বাবা হন সুমন কল্যাণ ও কন্যা সন্তানের বাবা হন ‘ঘুড়ি’ খ্যাত লুৎফর হাসান। আর ২৪শে ডিসেম্বর পুত্র সন্তানের বাবা হন হাবিব ওয়াহিদ। মাঝখানে দ্বিতীয় সন্তানের জনক হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করেন মাইলস ব্যান্ডের শাফিন আহমেদ। রমনা থানায় নাটকীয়ভাবে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। অন্যদিকে বেশ অনাড়ম্বর পূর্ণ আয়োজনে পারিবারিকভাবে এ বছর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন ক্লোজআপ তারকা সাব্বির এবং রন্টি দাস। আর বছরের শেষ প্রান্তে এসে অকালে মৃত্যুবরণ করেন তরুণ শিল্পী হাসিব। এদিকে মডেল কন্যা সুজানা’র প্রেমের টানে বাবা-মায়ের ঘর ত্যাগ করলেন হৃদয় খান। অন্যদিকে সমনুর মনির কোনাল এবং পৃথ্বিরাজের প্রেমের বিষয়টিও এ বছর স্পষ্ট রূপ নেয়।
উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম:
‘স্টুডিও সম্পর্ক’ নামে গানের স্টুডিও গড়েছেন রিংকু। ‘গল্প’ নাম দিয়ে মুহিন গড়েছেন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। পড়শী গড়েছেন ব্যান্ড ‘বর্ণমালা’। চ্যানেল আই ক্যাফেটরিয়াতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের জন্য দু’টি টেবিল বরাদ্দ দিয়েছে চ্যানেল আই। এ বছর নিজস্ব বাড়ি নির্মাণ করেন কুমার বিশ্বজিৎ (ঢাকায়) এবং ন্যান্সি (নেত্রকোনায়)। কনকচাঁপার কবিতার বই ও আবৃত্তি অ্যালবাম ‘মুখোমুখি যোদ্ধা’ প্রকাশ পেয়েছে একুশে বই মেলায়। ‘ছায়া-ছবি’ চলচ্চিত্রের একটি গানে অংশ নিয়েছেন আরফিন রুমি ও শহীদ। বিয়ে কেন্দ্রিক জটিলতার কারণে ব্যান্ড ‘দূরবীন’ থেকে বাদ পড়েছেন আরফিন রুমি। নিজের নতুন এককে গান লিখেছেন বালাম। মিমির গানের ভিডিও নির্মাণ করেছেন হৃদয় খান। ৫৫ ব্যান্ডের গান নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে দূরে’র ‘হাতিয়ার’। চলতি বছরে বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন সৈয়দ আবদুল হাদী, আইয়ুব বাচ্চু, শাফিন আহমেদ, প্রীতম, আঁখি আলমগীর, পুতুল, এলিটা, সাব্বির, দিনাত জাহান মুন্নী, কোনাল, জয়, নিশীতা, তিশমা, পুতুল, আর্নিক, বাপ্পা মজুমদার, শফিক তুহিন প্রমুখ। কুষ্টিয়ায় এস,আই টুটুল গড়েছেন স্কুল ‘ধ্রুবতারা একাডেমি’। প্রথমবারের মতো বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছেন আঁখি আলমগীর।
সেরা ১২ অ্যালবাম:
সে অর্থে জনপ্রিয়তার মাপে নয়, বরং গানের মানের বিচারে এ বছর অন্তত এক ডজন অ্যালবাম সংগীতাঙ্গনের মুখ উজ্জ্বল করেছে নানা মাত্রায়। এর মধ্যে রয়েছে প্রিন্স মাহমুদের কথা-সুরে ‘অপরাজিতা’, আরফিন রুমির সংগীতে ‘ছায়া-ছবি’, ন্যান্সি’র ‘রঙ’, এলআরবি’র ‘যুদ্ধ’, জুলফিকার রাসেলের কথায় ‘পরস্পর-২’, পড়শীর একক ‘পড়শী-২’, শফিক তুহিনের কথা-সুরে ‘পাগলামী’, বাপ্পা’র ‘বেঁচে থাক সবুজ’, হাবিবের সংগীত পরিচালনায় ‘তুমি সন্ধ্যারও মেঘমালা’, কণার ‘সিম্পলি কণা’, প্রীতমের ‘ভালো থেকো’, কিশোর-সাব্বিরের সংগীত পরিচালনায় ‘পায়রা’ এবং অর্ণবের ‘আধেক ঘুমে’ প্রভৃতি।
সেরা ১২ গান:
এ বছরে সুপার হিট গান একটিও নেই। তবে মৃদু হিট হয়েছে বেশ কিছু গান। এর মধ্যে রয়েছে, হাবিব-ন্যান্সির ‘ঝরাপাতা’, শফিক তুহিন-ন্যান্সির ‘পাগলামী’, তপু-ন্যান্সির ‘ভুবন ডাঙ্গার হাসি’, রিজভী ওয়াহিদের ‘চোখেরই পলকে’, ইমরান-পূজা’র ‘দূরে দূরে’, কিশোরের ‘একা একাই ভালবাসি’, হাবিবের ‘অন্তহীন’, আরফিন রুমি-পড়শীর ‘পথ জানা নেই’, সুমন কল্যাণের ‘বোকা প্রেমিকের দল’, ন্যান্সি-লুৎফর হাসানের ‘ভাবনায় ভাসি ডুবি ’, প্রীতমের ‘কার জন্য’ এবং বেলাল খানের ‘কাটেনা যে বেলা’।
- মানবজমিন ২৬ ডিসেম্বর ২০১২