চলচ্চিত্র
গানের গল্প
সময়টা নির্দিষ্ট করে মনে নেই। খুব সম্ভবত ১৯৭৯ সালের কথা হবে। আমি তখন থাকি ঢাকার খিলগাঁওয়ে। আমার পাশাপাশি একটি বাসার প্রতিবেশী ছিলেন আলাউদ্দীন আলী। প্রতিদিনই একবার করে আমাদের দেখা হতো। হয় আমি তার বাসায় যেতাম নয়তো বা তিনি আমার বাসায় আসতেন। এমনি করে একদিন তিনি জানালেন যে, একটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিতে হবে। চলচ্চিত্রের নাম 'ফকির মজনু শাহ'। গানের সাথে ঠোঁট মেলাবেন নায়ক উজ্জ্বল। একটু অন্যরকম কথা দিয়ে গান লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আমি ধারণা করলাম, ভালো একটি গানের জন্ম হতে যাচ্ছে। কেননা, আমরা তিনজন যতবার একসাথে গান করেছি, ততবারই শ্রুতিমধুর গান পেয়েছে শ্রোতারা। যাক, গান আমার হাতে এলো, সাথে সুরও পেলাম। নিজেকে প্রস্তুত করে একদিন নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হলাম কাকরাইলে অবস্থিত ইপ্সা নামের রেকর্ডিং স্টুডিওতে। গান গাইলাম। সবাই বলছে দারুণ হয়েছে। কিন্তু আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। এটা ছিলো আমার একটা স্বভাব। যা আমার কাছে ভালো মনে হয় না আমি কখনও তাকে গ্রহণ করি না। এবারও হলো তাই। আলাউদ্দীনকে বললাম যে, আমি আবার গাইব। তিনিও আমার কথায় সায় দিলেন। দ্বিতীয়বার গাওয়া গানটিই বাজারে বেরিয়েছিলো। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই সময়ে এ গানের জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বি। এখনও এ গান নিয়ে আমি নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছ থেকে প্রশংসা পাই। আমার নিজেরও বারবার শুনতে ভালো লাগে। আমি আজীবন ধন্যবাদ জানাই গানের গীতিকার ও সুরকারকে। কারণ, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লিখা কথাগুলো ছিলো তখনকার সমসাময়িক গানের কথার চাইতে একটু ভিন্ন ও নতুন আঙ্গিকের। আর সুর ও সংগীত পরিচালনায় আলাউদ্দীন আলী ব্যবহার করেছিলো নিজস্ব একটা নতুন স্টাইল। এ কারণেই শ্রোতারা এ গানকে অনেক ভালোবেসেছিলো, জনপ্রিয়তা পেয়েছিল গানটি। কথার মজা, ভাব ও সুরে প্রাণ আছে বলেই গানটি আজও মানুষের হূদয়ে বাজে, অন্তরে বেঁচে আছে। এমন একটি শ্রুতিমধুর গানের শিল্পী হিসেবে নিজেকে নিয়ে আমার অনেক গর্ব হয়।
চিত্রনায়িকা মৌসুমী প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি ছবির মাধ্যমে। বৈশাখ নিয়ে লেখা এ ছবির একটি গান ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা অর্জন করে। সেই গানটি সৃষ্টির নেপথ্য গল্প বলেছেন গানের গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার--
আমার সারা জীবনের যতগুলো আলোচিত ও ভালো গান লিখতে পেরেছি তার মধ্যে এটি একটি অন্যতম সেরা গান। মৌসুমী আমার অনেক পছন্দের একজন নায়িকা। তিনি পরিচালক হবেন আর আমাকে গান লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, অবশ্যই আমি একটু বেশি যত্নবান ছিলাম। আবার সত্য সাহার জীবদ্দশায় আমি প্রথম তার ছেলে ইমন সাহাকে সঙ্গীত পরিচালনা করার সুযোগ করে দেই। এ ছবির সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা। সুতরাং এদিকেও একটি দুর্বলতা ছিল। একদিন ইমন সাহার স্টুডিওতে আমি, মৌসুমী, ইমন আর সাংবাদিক গুলজার বসে গানের বিষয়েই আলাপ করছিলাম। মৌসুমী আমাকে বলল, বৈশাখ নিয়ে গানটি হলে ভালো হয়। তবে প্রেমের গান। এ কথা বলার পরই আমি কবিতার ঢংয়ে বললাম, এই বৈশাখে লেখা প্রেমের চিঠি মনের গভীরে রেখ। এরপর গানের অন্তরার শেষ শব্দগুলো পরিবর্তন করে লিখলাম—এই বৈশাখে লেখা প্রেমের চিঠি নির্জনে পড়ে নিও, জ্যৈষ্ঠের কোন গরম দুপুরে তারই উত্তর দিও। ব্যাস এভাবেই গানটির লেখা শেষ করলাম। আমি মৌসুমীর কাছে জানতে চাইলাম ছবিতে কার লিপে গানটি দেখা যাবে। সে জানাল রাজ্জাকের লিপে। তখন শিল্পী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলো। এখানেও মৌসুমী চমক দেয়ার জন্য আমাকে প্রথম বশির আহমেদের কথা বলল। আমি ইমন রাজি হয়ে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম গানটি রেকর্ডিংয়ে সমস্যা হবে। কেননা বশিরের বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু তার কিছুই হলো না। কেননা বশির এখনও চর্চার মধ্যে রয়েছে। যে কারণে দমে কোনো সমস্যা হয়নি। আর এখন তো কেটে কেটে নেয়া হয়। যে কারণে কোনো ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই এ গানটি তৈরি হয়ে যায়।
আমার সারা জীবনের যতগুলো আলোচিত ও ভালো গান লিখতে পেরেছি তার মধ্যে এটি একটি অন্যতম সেরা গান। মৌসুমী আমার অনেক পছন্দের একজন নায়িকা। তিনি পরিচালক হবেন আর আমাকে গান লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, অবশ্যই আমি একটু বেশি যত্নবান ছিলাম। আবার সত্য সাহার জীবদ্দশায় আমি প্রথম তার ছেলে ইমন সাহাকে সঙ্গীত পরিচালনা করার সুযোগ করে দেই। এ ছবির সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা। সুতরাং এদিকেও একটি দুর্বলতা ছিল। একদিন ইমন সাহার স্টুডিওতে আমি, মৌসুমী, ইমন আর সাংবাদিক গুলজার বসে গানের বিষয়েই আলাপ করছিলাম। মৌসুমী আমাকে বলল, বৈশাখ নিয়ে গানটি হলে ভালো হয়। তবে প্রেমের গান। এ কথা বলার পরই আমি কবিতার ঢংয়ে বললাম, এই বৈশাখে লেখা প্রেমের চিঠি মনের গভীরে রেখ। এরপর গানের অন্তরার শেষ শব্দগুলো পরিবর্তন করে লিখলাম—এই বৈশাখে লেখা প্রেমের চিঠি নির্জনে পড়ে নিও, জ্যৈষ্ঠের কোন গরম দুপুরে তারই উত্তর দিও। ব্যাস এভাবেই গানটির লেখা শেষ করলাম। আমি মৌসুমীর কাছে জানতে চাইলাম ছবিতে কার লিপে গানটি দেখা যাবে। সে জানাল রাজ্জাকের লিপে। তখন শিল্পী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলো। এখানেও মৌসুমী চমক দেয়ার জন্য আমাকে প্রথম বশির আহমেদের কথা বলল। আমি ইমন রাজি হয়ে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম গানটি রেকর্ডিংয়ে সমস্যা হবে। কেননা বশিরের বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু তার কিছুই হলো না। কেননা বশির এখনও চর্চার মধ্যে রয়েছে। যে কারণে দমে কোনো সমস্যা হয়নি। আর এখন তো কেটে কেটে নেয়া হয়। যে কারণে কোনো ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই এ গানটি তৈরি হয়ে যায়।
স্টুডিওতে বসে ছিলাম। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল। মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর নাম। রিসিভ করতেই বললেন, শুভ ভাই, একটি গান করতে হবে। জানতে চাইলাম কিসের গান। বললেন, 'এক বিন্দু ভালোবাসা দাও' গানটির মতো শ্রুতিমধুর একটি গান। উলেস্নখ্য যে, 'মনে প্রাণে আছো তুমি' ছবিতে আমার সুর করা উক্ত গানটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। আমি বললাম, রাজু ভাই সিনেমার গল্প নিয়ে চলে আসুন। এদিকে গান লেখার জন্য রফিকুজ্জামান সাহেবকে আসতে বললাম। একদিন নির্ধারিত সময়ে আমার স্টুডিওতে সবাই বসলাম । রাজু ভাই আমাদেরকে ছবির গল্প বুঝিয়ে দিলেন। আমরাও এর সাথে সঙ্গতি রেখে গানটি তৈরি করার চেষ্টা করলাম। মনে পড়ে, আমরা পরপর তিনদিন বসলাম গানটি নির্মানের জন্য। প্রতিদিনই রফিকুজ্জামান সাহেব গানের অনেক কথাই শোনাচ্ছিলেন। কিন্তু কেন জানি কথাগুলো মনের মতো হচ্ছিল না। আমি তাকে আরও চেষ্টা করতে বললাম। চারদিনের মাথায় হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন, ' কি যাদু করেছো বলোনা, ঘরে আর থাকা যে হলোনা'। শুনেই বলে উঠলাম আর চেষ্টা করার কিছু নেই , এই কথাগুলোই চাচ্ছিলাম। আমি তাকে পুরো গানটা শেষ করতে বললাম। গানের মুখ পেয়ে যাবার পর গান শেষ করার জন্য বেশি সময় নেননি তিনি। পুরো গানের কথাগুলো খুব পছন্দ হয়ে গেল। রাজু ভাইও সায় দিলেন গানটি দারুণ হয়েছে বলে। এবার আমার কাজ শুরু। গানটিকে বিরহের পাশাপাশি রোমান্টিক করে তুলতে চাইলাম। খুঁজে পেলাম এই প্রিয় সুরটা। গান গাওয়ার জন্য ডাকলাম এন্ড্র- কিশোর আর কনক চাঁপাকে। কারণ, তারা দুজনেই 'এক বিন্দু ভালোবাসা দাও' গানটি গেয়েছিলেন। শিল্পীরা যখন গাইছিলেন, তখনই মনে হয়েছিলো গানটি 'হিট' করবে। কিন্তু এতটা হিট করবে তা বুঝতে পারিনি। অতঃপর শিল্পীরা এলেন, গাইলেন এবং জয় করলেন অসংখ্য শ্রোতার হূদয়। আর তা হয়ে উঠলো আমার অনেকগুলো জনপ্রিয় গানের অন্যতম একটি।
সোহেল আরমান নির্মাণ করছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'এইতো প্রেম'। ছবিটি এখনও নির্মাণাধীন থাকলেও ইতিমধ্যে সারা দেশের সব শ্রেণীর শ্রোতাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই ছবির 'আমি তোমার মনের ভেতর' শিরোনামের গানটি। আজকের আয়োজনে এ গানের গল্প বলেছেন গীতিকার ও 'এইতো প্রেম' ছবির পরিচালক সোহেল আরমান।
ভাবছিলাম ছবির জন্য একটি রোমান্টিক ভালোবাসার গান লিখব। সাধারণত আমাদের বাংলা ছবির গানগুলো হয় একটু সহজ কথা আর সুরের। তাই চেষ্টা করলাম সহজ কিছু লিখতে। কিন্তু অনেকদিন ভেবেও তেমন পছন্দনীয় কোনো কথা পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ একদিন ভাবনা এল পৃথিবীর সমস্ত মানুষের চাওয়াটা কি? খাওয়া-পরা আর বেঁচে থাকা সব কিছুই টিকে আছে নর-নারীর ভালোবাসার সম্মিলনে। তার মানে পৃথিবীর সব মানুষেরই মন চায় ভালোবাসা পেতে। আর যার কাছে ভালোবাসা চায়, তার কাছে জানতে চায় সেও ভালোবাসে কিনা। চেষ্টা করলাম জানতে চাওয়া এই প্রশ্ন বা আকাঙ্ক্ষার জবাব বের করতে। এক রাতে লিখতে বসলাম। সারারাত লিখে লিখে নষ্ট কাগজ দিয়ে রুমের ফ্লোর ঢেকে গেল। সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল আমার। তার চোখে বিস্ময়! জানতে চাইলেন, এত কাগজ ছেঁড়া কেন। বললাম, গান লিখছিলাম কিন্তু পছন্দ হচ্ছিলোনা বলে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি। কি লিখেছিলাম তাই দেখাতে বলে মা চলে গেলেন তার রুমে। আমি দু-একটি দলা পাকানো কাগজ বিরক্তমুখে মায়ের কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি প্রথম যেটা খুললেন, সেটাই ছিলো এই গানের প্রথম চার লাইন। মা বললেন, বেশ ভালো হয়েছে গানটি। আমি কেন তা ছিঁড়ে ফেলেছি। বললাম, গানের কথাগুলো বেশি সহজ হয়ে গেছে। তিনি বললেন, 'সোহেল তুমি স্রষ্টা, সহজেই সৃষ্টি করতে পার। তাই তোমার কাছে সহজ লাগছে। কিন্তু আমি বলছি এ গান মোটেও সহজ কিছু নয়। তুমি এই গানটাই করবে। দেখে নিও গান ভালো হবেই।' মায়ের কথা শুনে এই গানটি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। পুরো গানের কথা লিখতে আমার সময় লেগেছিলো প্রায় চার মাস। যাক, গান নিয়ে গেলাম সংগীত পরিচালক হাবিবের কাছে। গান দেখে তিনি মুগ্ধ। তিনিও বললেন 'সোহেল ভাই গান দারুণ হবে'। তারপর মিষ্টি এই সুর করলেন হাবিব ভাই। ভালোলাগার মতো মিউজিক করে কণ্ঠ দিলেন ন্যান্সি এবং হাবিব নিজেই। গানটির ছবির কাজ এখনও চলছে, অথচ গান সারা দেশব্যাপী হিট! বিষয়টি ভাবতেই গর্ববোধ হয়। অবশ্য গানের এই জনপ্রিয়তার জন্য প্রশংসার দাবিদার আমার মা এবং সুর ও সংগীত পরিচালক হাবিব ওয়াহিদ।
ভাবছিলাম ছবির জন্য একটি রোমান্টিক ভালোবাসার গান লিখব। সাধারণত আমাদের বাংলা ছবির গানগুলো হয় একটু সহজ কথা আর সুরের। তাই চেষ্টা করলাম সহজ কিছু লিখতে। কিন্তু অনেকদিন ভেবেও তেমন পছন্দনীয় কোনো কথা পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ একদিন ভাবনা এল পৃথিবীর সমস্ত মানুষের চাওয়াটা কি? খাওয়া-পরা আর বেঁচে থাকা সব কিছুই টিকে আছে নর-নারীর ভালোবাসার সম্মিলনে। তার মানে পৃথিবীর সব মানুষেরই মন চায় ভালোবাসা পেতে। আর যার কাছে ভালোবাসা চায়, তার কাছে জানতে চায় সেও ভালোবাসে কিনা। চেষ্টা করলাম জানতে চাওয়া এই প্রশ্ন বা আকাঙ্ক্ষার জবাব বের করতে। এক রাতে লিখতে বসলাম। সারারাত লিখে লিখে নষ্ট কাগজ দিয়ে রুমের ফ্লোর ঢেকে গেল। সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল আমার। তার চোখে বিস্ময়! জানতে চাইলেন, এত কাগজ ছেঁড়া কেন। বললাম, গান লিখছিলাম কিন্তু পছন্দ হচ্ছিলোনা বলে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি। কি লিখেছিলাম তাই দেখাতে বলে মা চলে গেলেন তার রুমে। আমি দু-একটি দলা পাকানো কাগজ বিরক্তমুখে মায়ের কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি প্রথম যেটা খুললেন, সেটাই ছিলো এই গানের প্রথম চার লাইন। মা বললেন, বেশ ভালো হয়েছে গানটি। আমি কেন তা ছিঁড়ে ফেলেছি। বললাম, গানের কথাগুলো বেশি সহজ হয়ে গেছে। তিনি বললেন, 'সোহেল তুমি স্রষ্টা, সহজেই সৃষ্টি করতে পার। তাই তোমার কাছে সহজ লাগছে। কিন্তু আমি বলছি এ গান মোটেও সহজ কিছু নয়। তুমি এই গানটাই করবে। দেখে নিও গান ভালো হবেই।' মায়ের কথা শুনে এই গানটি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। পুরো গানের কথা লিখতে আমার সময় লেগেছিলো প্রায় চার মাস। যাক, গান নিয়ে গেলাম সংগীত পরিচালক হাবিবের কাছে। গান দেখে তিনি মুগ্ধ। তিনিও বললেন 'সোহেল ভাই গান দারুণ হবে'। তারপর মিষ্টি এই সুর করলেন হাবিব ভাই। ভালোলাগার মতো মিউজিক করে কণ্ঠ দিলেন ন্যান্সি এবং হাবিব নিজেই। গানটির ছবির কাজ এখনও চলছে, অথচ গান সারা দেশব্যাপী হিট! বিষয়টি ভাবতেই গর্ববোধ হয়। অবশ্য গানের এই জনপ্রিয়তার জন্য প্রশংসার দাবিদার আমার মা এবং সুর ও সংগীত পরিচালক হাবিব ওয়াহিদ।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মুক্তি প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' এর সাথে আমি প্রথম থেকেই সম্পৃক্ত। বলা যায়, এই চলচ্চিত্রের গল্পটার সাথেই আমি কিছুদিন বেড়ে উঠেছি। ফলে চলচ্চিত্রের গল্প এবং এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আমার মাথায় আগে থেকেই ছিল। সে অনুযায়ীই আমি 'দ্বিধা' গানটি লিখতে বসি। গানটি আমি শেষ করেছিলাম একদিন ভোরে। তবে এর পেছনে যে চিনত্মার জায়গাটা সেটা বহুদিন থেকেই আমার মাথায় ছিল। এবং আমার গানের ক্ষেত্রে সচরাচর যেটি হয় সেই বিষয়টি অর্থাৎ কখনো রাস্তায় চলতে চলতে আবার কখনো বা বাসায় বসেই হয়তো গানের একেকটা লাইন আমার মাথায় এসেছে। তারপর বহুবার কাটাকাটি এবং পরিমার্জন, সংশোধনের মধ্য দিয়েই আমি লিরিক্সটা ফাইনাল করি। মানুষের মনে যে দোদুল্যমনতা, তার মধ্যে যে দোটানা, তিনটানা, চারটানা সেই বিষয়টাকে উপজীব্য করেই এ গানটা এগিয়েছে। প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে সিজোফ্রেনিয়াক সিচু্যয়েশন এবং তার যে 'স্পিস্নট পার্সোনালিটি' সেই পার্সোনালিটির গল্পই হলো গানটি। দেখা যায় মানুষের মধ্যে যে স্পিস্নট পার্সোনালিটি সেখানে প্রতিটি টুকরোই হয়তো আলাদা আলাদা চাহিদা নিয়ে বেড়ে ওঠে। এর মধ্যে আমরা একটা অংশের কথায় সায় দেই আবার একটা থেকে যায় উপেক্ষিত। আর এসব কিছু মিলিয়েই 'দ্বিধা' গানটি। অবশ্য এখন যদি আমাকে গানের টাইটেলটি আবারো দেয়ার সুযোগ দেয়া হতো তাহলে আমি হয়তো গানটির টাইটেল দিতাম 'দ্বান্দ্বিক সম্পর্কবাজ' অথবা 'যামু কই' টাইপের কিছু।
প্রিয় গানের তালিকায় বেশিরভাগ গানই থাকে ভালোবাসা নিয়ে। এ কথা প্রায় সব মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভালোবাসার গান শুধু শুনেই ক্ষান্ত নই, গুনগুনিয়ে গাইতেও ভালোবাসি সবাই। এমনই একটি গান হলো এস এ হক অলিক পরিচালিত ‘হূদয়ের কথা’ চলচ্চিত্রের ‘ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু...’। হাবিব ওয়াহিদের গাওয়া এই গানটির প্রণয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল সব বয়সী গানপাগল মানুষ। গানটির কথা ও সুরই শুধু নয়, দৃশ্যায়নও মুগ্ধ করেছিল শ্রোতা ও দর্শকদের। জনপ্রিয় এ গানের পেছনের গল্পটি জানতে আমরা পরিচালক এস এ অলিকের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। তিনি শোনালেন সে গল্প, ‘হূদয়ের কথা চলচ্চিত্র নিয়ে আমি খুব সিরিয়াস ছিলাম। চাইছিলাম এর সবকিছুই যেন সুন্দর হয়। গল্প থেকে শুরু করে গান পর্যন্ত কোথাও কোনো ছাড় দিতে চাইনি। তাই যখন গল্পের প্রয়োজনে গান যোগ করতে হলো তখন ভালো এবং মৌলিক কোনো কথা ও সুর খুঁজছিলাম। গানের কথার জোগানদার হিসেবে আমি বেছে নিয়েছিলাম জুয়েল মাহমুদকে। সে আমার এ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে তখন কাজ করছিল। এর আগে আমার নির্মিত কয়েকটি নাটকের শিরোনাম সংগীতের গীতিকার ছিল সে। আমি, জুয়েল ও রিয়াজ ভাই (নায়ক) একদিন বসলাম গান নিয়ে। রাত তখন আড়াইটা বাজে। জুয়েল নানা কথায় গান সাজাচ্ছিল। কোনোটাই মনে ধরছিল না। একসময় তাকে বললাম, জুয়েল ভালোবাসার কথা এত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে না বলে সরাসরি বল। ভালোবাসা বিষয়টাই সরল সুন্দর। এখানে এত জটিলতার কী প্রয়োজন! এ কথা শুনে জুয়েল সহজ সাবলীল ভাষায় গানটি লিখে ফেলল। আমাদের সবারই খুব পছন্দ হলো। এরপর এল গায়ক ও সুরকার খোঁজার পালা। আমরা হাবিবকে বেছে নিলাম তার ভিন্ন ধরনের গায়কীর কারণে। এর আগে হাবিবের সাথে আমার কোনো মুখোমুখি পরিচয় ছিল না। এ গানের সূত্রেই পরিচয়ের শুরু। হাবিব অনেক যত্ন নিয়ে গানটির সুর করে আমাদের গেয়ে শোনাল। শুনে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে তাকে বললাম, এটা কি হলো! এ গানের দৃশ্যায়নের প্ল্যানই তো এখন পাল্টাতে হবে। সত্যিই তাই হয়েছিল। এত সুন্দর একটি গানের চিত্রায়নই তখন আমার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অবশ্য আমি এ চ্যালেঞ্জের সফল মোকাবেলা করেছি। কারণ দর্শকরা গানটির কথা-সুরের পাশাপাশি চিত্রায়নেও মুগ্ধ হয়েছে।’
একটি গান কী গুণে বাসা বাঁধে শ্রোতার মনে? এর উত্তর কিন্তু বাঁধা থাকে না কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে। একেকজন একেক কারণ বলবেন। তাই নানা পথে না গিয়ে পথের উেস থাকা মানুষটি অর্থাত্ গীতিকারের কাছে প্রশ্ন রাখা শ্রেয়তর। এবার আমাদের এ আয়োজনে গীতিকার জাহিদ আকবরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেমন করে 'ডুব' গানটি বাসা বেঁধেছিল তার মনে, অর্থাৎ গানটির পেছনের গল্পটি--
'দিন তারিখ মনে নেই, কোনো এক দুপুরে বাংলা মোটর ওভার ব্রিজ থেকে নামছিলাম। এ সময় যেন হঠাত্ করেই মাথায় ঢুকে গেল কয়েকটি লাইন—তোমার ভেতর নামব আমি/ তোমার ভেতর ডুব/ তোমার ভেতর কাটব সাঁতার/ ভাসব আমি খুব। ব্যস এই কয়েকটি শব্দে বাঁধা পড়ে গেল আমার মন। তারপর একদিন আড্ডায় মোস্তফা কামাল রাজ জানতে চাইলেন, 'ইদানীং কী লিখেছেন?' আমি তাকে এ কয়েকটি লাইন শোনালাম। শুনে রাজ বলল, 'ভাই গানের কথাগুলো আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। গানটা অবশ্যই আমাকে দেবেন।' আমি তাকে কথা দিলাম। এর প্রায় দেড় বছর পর রাজ আমাকে ফোন করে জানালেন, তিনি তার চলচ্চিত্র 'প্রজাপতি'তে এ গানটি ব্যবহার করবেন। এরপর চলচ্চিত্রের সিক্যুয়েন্সটিও বুঝিয়ে দিলেন। পরে অবশ্য আমি জেনেছিলাম গানটি ব্যবহার করার জন্যই তিনি চলচ্চিত্রে ওই সিক্যুয়েন্সটি তৈরি করেছিলেন। আমি তাকে পুরো গানটি এসএমএস করে পাঠিয়ে দিলাম। বলে রাখা ভালো, এ সময় থেকেই আমি খাতা কলমে গান লেখা ছেড়েছি। যাই হোক, রেকর্ডিংয়ে যখন গানটি প্রথমবার শুনি তখন খুব একটা ভালো লাগেনি। কিন্তু শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া ছিল উল্টো। শুনেছি রেডিও ফুর্তিতে গানের টপচার্টে দু'বছর এটি এক নম্বরে ছিল। এ গানটিকে আমার টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। এ গান নিয়ে পরিচিত-অপরিচিতজনের নানা মন্তব্যই পেয়েছি। তবে সবাই একটি বিষয় বলেছে, জাহিদ তোমার গানটা যতটা রোমান্টিক তোমাকে দেখে কিন্তু ততটা মনে হয় না।'
'দিন তারিখ মনে নেই, কোনো এক দুপুরে বাংলা মোটর ওভার ব্রিজ থেকে নামছিলাম। এ সময় যেন হঠাত্ করেই মাথায় ঢুকে গেল কয়েকটি লাইন—তোমার ভেতর নামব আমি/ তোমার ভেতর ডুব/ তোমার ভেতর কাটব সাঁতার/ ভাসব আমি খুব। ব্যস এই কয়েকটি শব্দে বাঁধা পড়ে গেল আমার মন। তারপর একদিন আড্ডায় মোস্তফা কামাল রাজ জানতে চাইলেন, 'ইদানীং কী লিখেছেন?' আমি তাকে এ কয়েকটি লাইন শোনালাম। শুনে রাজ বলল, 'ভাই গানের কথাগুলো আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। গানটা অবশ্যই আমাকে দেবেন।' আমি তাকে কথা দিলাম। এর প্রায় দেড় বছর পর রাজ আমাকে ফোন করে জানালেন, তিনি তার চলচ্চিত্র 'প্রজাপতি'তে এ গানটি ব্যবহার করবেন। এরপর চলচ্চিত্রের সিক্যুয়েন্সটিও বুঝিয়ে দিলেন। পরে অবশ্য আমি জেনেছিলাম গানটি ব্যবহার করার জন্যই তিনি চলচ্চিত্রে ওই সিক্যুয়েন্সটি তৈরি করেছিলেন। আমি তাকে পুরো গানটি এসএমএস করে পাঠিয়ে দিলাম। বলে রাখা ভালো, এ সময় থেকেই আমি খাতা কলমে গান লেখা ছেড়েছি। যাই হোক, রেকর্ডিংয়ে যখন গানটি প্রথমবার শুনি তখন খুব একটা ভালো লাগেনি। কিন্তু শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া ছিল উল্টো। শুনেছি রেডিও ফুর্তিতে গানের টপচার্টে দু'বছর এটি এক নম্বরে ছিল। এ গানটিকে আমার টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। এ গান নিয়ে পরিচিত-অপরিচিতজনের নানা মন্তব্যই পেয়েছি। তবে সবাই একটি বিষয় বলেছে, জাহিদ তোমার গানটা যতটা রোমান্টিক তোমাকে দেখে কিন্তু ততটা মনে হয় না।'