নির্মলেন্দু গুণের কবিতা অবলম্বনে
মাসুদ পথিকের
নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান
নির্মলেন্দু গুণের কবিতা অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে জাতীয় অনুদান প্রাপ্ত চলচ্চিত্র নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান। নির্মান কাজ ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০ ভাগ সমাপ্ত হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে পুরোকাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা করছেন ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন ১৫ জন কবি। এঁরা হলেন - নির্মলেন্দু গুণ, অসীম সাহা, অমিতাভ পাল, সৌমিত্র দেব, বদরুল হায়দার, সনজিব পুরোহিত, মাঈন মজুমদার, সিরাজ এহসান, তারেক মাহমুদ, আনজির লিটন, প্রানেশ চৌধুরী, দিলদার হোসেন, জহির বাপী, ফয়সাল শাহ, জাহেদ সারওয়ার ও মাসুদ পথিক।
একজন কৃষকের জীবনকাহীনি নিয়ে ছবিটির গল্প নির্মিত হয়েছে। ছবিটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কবি নির্মলেন্দু গুন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন- আসাদুজ্জামান নূর, প্রবীর মিত্র, বাদল শহীদ, জুয়েল জহির, কবি অসীম সাহা, সমু চৌধুরী, দুখু সুমন, লাবণ্য লিজা, ফারহানা সুখী, সৈয়দ জুবায়ের, শেখ শাহেদ আলী এবং এক হাজার গ্রামবাসী। ছবিটির গল্প সম্পর্কে কবি নির্মলেন্দু গুন জানান, আমার কবিতা ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ অবলম্বনে চিত্রনাট্যটি তৈরী বরেছেন মাসুদ পথিক। পরিচালকও তিনি। ছবিটির কাহিনী গড়ে উঠেছে একজন ভূমিহীন প্রতিবাদী কৃষককে নিয়ে, তাঁর নাম নেকাব্বর। তিনি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। অনেকের ধারণা ছিল তিনি মুক্তিযুদ্ধে মারা গিয়েছেন। কিন্তু তিনি মারা যাননি। তার মাথায় প্রচ- আঘাত পেয়ে তিনি স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন। বহুদিন পর ফিরে আসলে পাগল বলে তাকে পাগলা গারদে রাখা হয়। কোন একদিন তিনি ঢাকায় এসে যেখানে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই জায়গা খুঁজতে থাকেন। ঘুরতে ঘুরতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন কিন্তু চারদিকে গাছপালা দেখে বুঝতে পারে না কোথায় জাতির জনক ভাষণ দিয়েছিলেন। পরে লালনচর্চা কেন্দ্রে এসে দেখেন লেখা আছে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা। কবির সঙ্গে তার পূর্বে পরিচয় ছিল। কবিকে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যান। কবি তাকে প্রথমদিকে চিনতে না পারলেও নাম শুনে চিনে ফেলেন। নেকাব্বর গ্রামের ফাতেমা নামে একটি মেয়েকে ভালবাসত। পরে জানতে পারল সে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছে ধর্ষিত হয়ে মারা গেছে। কিছুদিন পর নেকাব্বর ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। কবি নির্মলেন্দু গুণ দেখে পথে অনেক লোকের ভিড়। সবাই বলতে থাকে একজন লোক মারা গেছে। কবি কাছে গিয়ে দেখে সে আর কেউ নয়, কোন এক সময়ের প্রতিবাদী কৃষক নেতা নেকাব্বর। ছবিতে এভাবেই গল্পটা দাঁড় করানো হয়েছে। প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে কবি বলেন, আগে কখনও এই ধরনের অভিনয় করিনি। চেষ্টা করছি ভাল করার জন্য। ভালই লাগছে। যে কোন কাজ নতুন করে করাই তো একটা নতুন অভিজ্ঞতা। বার বার একটি শট নিতে হচ্ছে এবং তাকে আবার ঘষা-মাজা করে অন্যরকম করা হচ্ছে। টেলিভিশন নাটকের মতো অত সহজ নয় চলচ্চিত্রে কাজ করা।
শূটিংয়ের পর অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হয় এবং সংযোজনও করতে হয়। ছবিটির নির্মানশৈলী নিয়ে কবি বলেন, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান’ নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। আমার যে কবিতাটি আছে এই ছবিটির প্রয়োজনে তাঁকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে। ছবিটি এমনভাবে করা হচ্ছে, যা চলচ্চিত্রাঙ্গনে ছবির ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা এনে দেবে। আমি মনে করি ছবির জগতে এটা একটি যুগান্তকারী চলচ্চিত্রে রূপ নেবে। ছবিটির চিত্রগ্রহণে আছেন অপু রোজারিও। সঙ্গীত পরিচালনায় আছেন ড. সায়েম রানা, বেলাল খান, প্রিন্স মাহমুদ ও মাহমুদ সেলিম। ছবিটিতে বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মমতাজ, এস আই টুটুল, রিংকু, বেলাল খান, সফি মন্ডল, সুমনা বর্ধন।
একজন কৃষকের জীবনকাহীনি নিয়ে ছবিটির গল্প নির্মিত হয়েছে। ছবিটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কবি নির্মলেন্দু গুন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন- আসাদুজ্জামান নূর, প্রবীর মিত্র, বাদল শহীদ, জুয়েল জহির, কবি অসীম সাহা, সমু চৌধুরী, দুখু সুমন, লাবণ্য লিজা, ফারহানা সুখী, সৈয়দ জুবায়ের, শেখ শাহেদ আলী এবং এক হাজার গ্রামবাসী। ছবিটির গল্প সম্পর্কে কবি নির্মলেন্দু গুন জানান, আমার কবিতা ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ অবলম্বনে চিত্রনাট্যটি তৈরী বরেছেন মাসুদ পথিক। পরিচালকও তিনি। ছবিটির কাহিনী গড়ে উঠেছে একজন ভূমিহীন প্রতিবাদী কৃষককে নিয়ে, তাঁর নাম নেকাব্বর। তিনি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। অনেকের ধারণা ছিল তিনি মুক্তিযুদ্ধে মারা গিয়েছেন। কিন্তু তিনি মারা যাননি। তার মাথায় প্রচ- আঘাত পেয়ে তিনি স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন। বহুদিন পর ফিরে আসলে পাগল বলে তাকে পাগলা গারদে রাখা হয়। কোন একদিন তিনি ঢাকায় এসে যেখানে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই জায়গা খুঁজতে থাকেন। ঘুরতে ঘুরতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন কিন্তু চারদিকে গাছপালা দেখে বুঝতে পারে না কোথায় জাতির জনক ভাষণ দিয়েছিলেন। পরে লালনচর্চা কেন্দ্রে এসে দেখেন লেখা আছে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা। কবির সঙ্গে তার পূর্বে পরিচয় ছিল। কবিকে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যান। কবি তাকে প্রথমদিকে চিনতে না পারলেও নাম শুনে চিনে ফেলেন। নেকাব্বর গ্রামের ফাতেমা নামে একটি মেয়েকে ভালবাসত। পরে জানতে পারল সে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছে ধর্ষিত হয়ে মারা গেছে। কিছুদিন পর নেকাব্বর ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। কবি নির্মলেন্দু গুণ দেখে পথে অনেক লোকের ভিড়। সবাই বলতে থাকে একজন লোক মারা গেছে। কবি কাছে গিয়ে দেখে সে আর কেউ নয়, কোন এক সময়ের প্রতিবাদী কৃষক নেতা নেকাব্বর। ছবিতে এভাবেই গল্পটা দাঁড় করানো হয়েছে। প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে কবি বলেন, আগে কখনও এই ধরনের অভিনয় করিনি। চেষ্টা করছি ভাল করার জন্য। ভালই লাগছে। যে কোন কাজ নতুন করে করাই তো একটা নতুন অভিজ্ঞতা। বার বার একটি শট নিতে হচ্ছে এবং তাকে আবার ঘষা-মাজা করে অন্যরকম করা হচ্ছে। টেলিভিশন নাটকের মতো অত সহজ নয় চলচ্চিত্রে কাজ করা।
শূটিংয়ের পর অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হয় এবং সংযোজনও করতে হয়। ছবিটির নির্মানশৈলী নিয়ে কবি বলেন, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান’ নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। আমার যে কবিতাটি আছে এই ছবিটির প্রয়োজনে তাঁকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে। ছবিটি এমনভাবে করা হচ্ছে, যা চলচ্চিত্রাঙ্গনে ছবির ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা এনে দেবে। আমি মনে করি ছবির জগতে এটা একটি যুগান্তকারী চলচ্চিত্রে রূপ নেবে। ছবিটির চিত্রগ্রহণে আছেন অপু রোজারিও। সঙ্গীত পরিচালনায় আছেন ড. সায়েম রানা, বেলাল খান, প্রিন্স মাহমুদ ও মাহমুদ সেলিম। ছবিটিতে বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মমতাজ, এস আই টুটুল, রিংকু, বেলাল খান, সফি মন্ডল, সুমনা বর্ধন।
নেক্কাবরের মহাপ্রয়ান
কবি নির্মলেন্দু গুন
নেকাব্বর জানে তাঁর সম্পত্তির হিসাব চাইতে আসবে না
কেউ কোনোদিন।
এই জন্মে শুধু একবার চেয়েছিল একজন, ‘কী কইরা
পালবা আমারে,
তোমার কী আছে কিছু তেনা?’
সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে ফাতেমাকে জড়িয়ে দু’হাতে বুকে পিষে
বলেছিল নেকাব্বর;
‘আছে, আছে, লোহার চাককার মতো দুটা হাত,
গতরে আত্তীর বল – আর কীডা চাস্ মাগী।’
‘তুমি বুঝি খাবা কলাগাছ?’
আজ এই গোধুলিবেলায় প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালা চোখে নিয়ে
নেকাব্বর সহসা তাকালো ফিরে সেই কলাবাগানের গাঢ় অন্ধকারে।
তিরিশ বছর পরে আজ বুঝি সত্য হলো ফাতেমার মিষ্টি উপহাস।
পাকস্থলি জ্বলে ওঠে ক্ষুধার আগুনে, মনে হয় গিলে খায়
সাজানো কদলীবন,’
যদি ফের ফিরে পায় এতটুকু শক্তি দুটি হাতে, যদি পায়
দাঁড়াবার মতো এতটুকু শক্তি দুটি পায়ে।
কিন্তু সে কি ফিরে পাবে ফের?
ফাতেমার মতো ফাঁকি দিয়া সময় গিয়েছে ঢের চলে।
কারা যেন ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে সব শক্তি তার।
বিনিময়ে দিয়ে দেছে ব্যাধি, জরা, দুর্বলতা, বক্ষে ক্ষয়কাশ-
অনাদরে, অনাহারে কবরে ডুবেছে সূর্য, ফাতেমার তিরিশ বছর।
এখন কোথায় যাবে নেকাব্বর?
হয়তো গিলেছে নদী তার শেষ ভিটেখানি, কবর ফাতেমা-
কিন্তু তার শ্রম. তার দেহবল, তার অকৃত্রিম নিষ্ঠা কারা নিলো?
আজ এই গোধুলিবেলায় এই যে আমার পৃথিবীকে মনে হলো পাপ,
মনে হলো হাবিয়া দোজখ – কেউ কি নেবে না তার এতটুকু দায়?
মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চায় না সুদুরে চলে যেতে, নেকাব্বর ভাবে,
অজানা অচেনা স্বর্গে বুঝি মেটে বাস্তবের তৃষ্ণা কোনোদিন?
তবু যারা চায়, তারা কেন চায়? তারা কেন চায়? কেন চায়?
নেকাব্বর শুয়ে আছে জীবনের শেষ ইস্টিশনে। তার পচা বাসী শব
ঘিরে আছে সাংবাদিক দল। কেউ বলে অনাহারে, কেউ বলে অপুষ্টিতে,
কেউ বলে বার্ধক্যজনিত ব্যাধি, – নেকাব্বর কিছুই বলে না।
কবি নির্মলেন্দু গুন
নেকাব্বর জানে তাঁর সম্পত্তির হিসাব চাইতে আসবে না
কেউ কোনোদিন।
এই জন্মে শুধু একবার চেয়েছিল একজন, ‘কী কইরা
পালবা আমারে,
তোমার কী আছে কিছু তেনা?’
সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে ফাতেমাকে জড়িয়ে দু’হাতে বুকে পিষে
বলেছিল নেকাব্বর;
‘আছে, আছে, লোহার চাককার মতো দুটা হাত,
গতরে আত্তীর বল – আর কীডা চাস্ মাগী।’
‘তুমি বুঝি খাবা কলাগাছ?’
আজ এই গোধুলিবেলায় প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালা চোখে নিয়ে
নেকাব্বর সহসা তাকালো ফিরে সেই কলাবাগানের গাঢ় অন্ধকারে।
তিরিশ বছর পরে আজ বুঝি সত্য হলো ফাতেমার মিষ্টি উপহাস।
পাকস্থলি জ্বলে ওঠে ক্ষুধার আগুনে, মনে হয় গিলে খায়
সাজানো কদলীবন,’
যদি ফের ফিরে পায় এতটুকু শক্তি দুটি হাতে, যদি পায়
দাঁড়াবার মতো এতটুকু শক্তি দুটি পায়ে।
কিন্তু সে কি ফিরে পাবে ফের?
ফাতেমার মতো ফাঁকি দিয়া সময় গিয়েছে ঢের চলে।
কারা যেন ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে সব শক্তি তার।
বিনিময়ে দিয়ে দেছে ব্যাধি, জরা, দুর্বলতা, বক্ষে ক্ষয়কাশ-
অনাদরে, অনাহারে কবরে ডুবেছে সূর্য, ফাতেমার তিরিশ বছর।
এখন কোথায় যাবে নেকাব্বর?
হয়তো গিলেছে নদী তার শেষ ভিটেখানি, কবর ফাতেমা-
কিন্তু তার শ্রম. তার দেহবল, তার অকৃত্রিম নিষ্ঠা কারা নিলো?
আজ এই গোধুলিবেলায় এই যে আমার পৃথিবীকে মনে হলো পাপ,
মনে হলো হাবিয়া দোজখ – কেউ কি নেবে না তার এতটুকু দায়?
মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চায় না সুদুরে চলে যেতে, নেকাব্বর ভাবে,
অজানা অচেনা স্বর্গে বুঝি মেটে বাস্তবের তৃষ্ণা কোনোদিন?
তবু যারা চায়, তারা কেন চায়? তারা কেন চায়? কেন চায়?
নেকাব্বর শুয়ে আছে জীবনের শেষ ইস্টিশনে। তার পচা বাসী শব
ঘিরে আছে সাংবাদিক দল। কেউ বলে অনাহারে, কেউ বলে অপুষ্টিতে,
কেউ বলে বার্ধক্যজনিত ব্যাধি, – নেকাব্বর কিছুই বলে না।